সচিবের পেনশন থেকে জরিমানা আদায়!

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘অপারেশন সাপোর্ট টু দ্য এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (ইজিপিপি)’ প্রকল্পে আর্থিক অনিয়মের দায়ে সাবেক এক সচিবকে সাড়ে আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কুদ্দুসের পেনশন থেকে এ জরিমানার অর্থ কেটে নেয়া হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বিভাগ গত ২ নভেম্বর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অর্থছাড় করে এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্রটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রটি তারা পেয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

পরিপত্রে বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়িত ইজিপিপি প্রকল্পে ‘বকেয়া অনুপযুক্ত ব্যয়’ হিসেবে চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের বাজেটের অধীন অপ্রত্যাশিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে আট লাখ ৪০ হাজার ৬৯৩ টাকা বিশ্ব ব্যাংককে পরিশোধ করতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই টাকা বিশ্ব ব্যাংকে ফেরত দিয়ে এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।

সূত্র জানায়, তৎকালীন ইজিপিপি প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে চার লাখ ৫১ হাজার ১৪৩ টাকার মিসপ্রোকিউরমেন্ট এবং তিন লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকার অনুপযু্ক্ত আদেশর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাসহ মোট আট লাখ ৪০ হাজার ৬৯৩ টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই আব্দুল কুদ্দুস চাকরি থেকে অবসরের আগে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। ফলে বাংলাদেশ সর্ভিস রুল প্রথম খণ্ড-এর ২৪৭ বিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৩(বি) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে এই মামলা রুজু হয়। একই সঙ্গে গত বছরের ১৮ এপ্রিল তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী গত বছরের ২৫ এপ্রিল কারণ দর্শানো সংক্রান্ত একটি লিখিত জবাব দেন আব্দুল কুদ্দুস। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১ জুন তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়।

লিখিত জবাব ও শুনানিতে আব্দুল কুদ্দুস জানান, স্বাভাবিকভাবে তিনি কোনো আর্থিক অনিয়ম করেননি। তবে দুর্ভাগ্যবশত তিনি টেন্ডার ইভ্যালুয়েশন কমিটির ত্রুটি ধরতে পারেননি।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আব্দুল কুদ্দুসের লিখিত জবাব, ব্যক্তিগত শুনানির বক্তব্য, ভুলের স্বীকারোক্তি এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তার পেনশন হতে ওই পরিমাণ অর্থ কেটে নেয়ার আদেশ দিয়ে বিভাগীয় মামলাটির নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই অর্থসংশ্লিষ্ট সরকারি খাতে জমা হবে। বিধি মোতাবেক কেটে নেয়া অর্থ বাদে তার পেনশনের টাকা এবং পেনশনজনিত অন্যান্য আনুতোষিক পরিশোধের আদেশ দেয়া হয়েছে।