দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ৫১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হলে অর্থমন্ত্রী তার প্রশ্নোত্তরে প্রতিষ্ঠানওয়ারী তালিকাও তুলে ধরেন।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি অর্থ পাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে, যেটির পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে
>> চিনিকলগুলোর কাছে ৭,৮১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা
>> ফার্টিলাইজার, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউিটক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ৭,২৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা
>> টিসিবির কাছে ৫,০১৮ কোটি টাকা
>> বাংলাদেশ বিমানের কাছে ৪,৪৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন ৩০ শীর্ষ ঋণ খেলাপি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম ও পরিমাণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে শীর্ষ ঋণ খেলাপি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ কেলেঙ্কারি বন্ধে খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতাকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণকরত চিহ্নিতকরণ এবং উক্ত ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সে মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করে সার্কুলার জারি করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ ছাড়া ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে বিতরণ করা ঋণের অর্থ উদ্দিষ্ট খাতের পরিবর্তে যাতে অন্য খাতে ব্যবহার না হয় এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় তা নিয়মিত তদারকির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এসএফএস) আওতায় বর্তমানে মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধিত এজেন্টের সংখ্যায় প্রায় ১৭ লাখ ৭০ হাজার। এমএফএস গ্রাহক ২২ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে নারী ৯ কোটি ৩৩ লাখের বেশি। এসএফএসসহ অন্যান্য পদ্ধতি চালুর কারণে আগের তুলনায় অনেক সহজে রেমিটেন্স পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব মতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার।
অপর এক প্রশ্নে তিনি জানান, ১৭৬টি দেশে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ নারী কর্মীসহ ৯৭ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৯-১০ সালে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১০ হাজার ৭৫২ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ে সব থেকে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
পটুয়াখালী-১ আসনের এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ আলী বলেন, মে মাসের হিসাবে দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ এর বিপিএম৬ অনুযায়ী তা ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।