শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির স্মরণে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাশাপাশি পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের শহীদদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পালন করেছেন বিভিন্ন কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার সূর্য উদয়ের ক্ষণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়েছিল সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত প্রধানমন্ত্রীর মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বনানী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী এ মিলাদ মাহ্ফিলে অংশ নেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। সেদিন বিদেশে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।
শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড ইউনিট।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।