ক্রমবর্ধমান ফ্লাইটের চাপ সামলাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। দুইটি টার্মিনালের পর এবার তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে সুপরিসর ও অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই টার্মিনাল।
এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসাবে জাপানী সাহায্য সংস্থা জাইকা দিবে ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সংস্থান করবে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান, ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার বেসমারিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ইত্তেফাককে জানান, আগামী সাড়ে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে। নতুন এই টার্মিনালে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, এলিভেটেড রোড, মাল্টি লেভেল কার পার্কিং, ২৩টি পার্কিং বে, কার্গো কমপ্লেক্স ও তিনটি ট্যাক্সিওয়ে হবে। এটি দিয়ে প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে।
১৯৮১ সালে তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে এই টার্মিনাল দিয়ে সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয়ে আসছে; কিন্তু টার্মিনাল ভবনে কোনো বোর্ডিং ব্রিজ ছিল না। পরে আটটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই টার্মিনাল দিয়ে বছরে ৫২ শতাংশ যাত্রী ওঠা-নামা করে। আর ১৭ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর। বাকিরা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহার করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এই বিমানবন্দর থেকে ইউরোপ এবং এশিয়ার ১৮টি রুটে চলাচল করছে। এ বিমানবন্দর দিয়ে বার্ষিক প্রায় ৪০ লাখ আন্তর্জাতিক ও ১০ লাখ অভ্যন্তরীণ যাত্রী চলাচল এবং ১ লাখ ৫০ হাজার টন ডাক ও মালামাল পরিবহন হয়।
যখন কুর্মিটোলায় বর্তমান বিমানবন্দরটি চালু হয়েছিল তখন দেশের জনসংখ্য এবং প্রবাসীর সংখ্য ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আশির দশকের পরে বিদেশে কর্মসংস্থান এবং লেখাপড়ার জন্য দেশের মানুষের আগমন-নির্গমনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এছাড়া গার্মেন্টস শিল্প ও পর্যটন সম্প্রসারণের কারণে বিদেশিদের আকর্ষণও বাড়ে বাংলাদেশের প্রতি। ফলে আকাশ পথে মানুষের যাতায়াতও বৃদ্ধি পায়। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর নতুন রুট হিসাবে স্থান করে নিতে থাকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর; কিন্তু সেই তুলনায় তখন বাড়েনি রানওয়ে ও পার্কিং বেসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো। চাপ বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণ করা হয় এই বিমান বন্দর।
পরবর্তীতে বর্তমান সরকার পদ্মা সেতুর পূর্ব প্রান্তে ২৫ হাজার একর জমির ওপর সুপরিসর আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় ২০১১ সালে। দুই বছর আগে সেই প্রকল্প স্থগিত করা হয় এবং ঢাকা শহরের কাছাকাছি বিকল্প স্থানে সেটি নির্মাণের চিন্তাভাবনা চলছে।