 
                                            
                                                                                            
                                        
এমনিতেই তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত বরিশালের মানুষ। তার ওপরে অসহনীয় লোডশেডিং। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে পানির সংকট। প্রতি ঘণ্টা অন্তর লোডশেডিং ও পানি সংকট নগরীরবাসীকে মাত্রাতিরিক্ত ভোগাচ্ছে। হতাশার বিষয় হচ্ছে- এতসব সংকট এক হওয়ায় রীতিমত হাপিয়ে উঠেছে রোজাদারেরা।
এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে তা শুনে অনেকে মাথায় হয়তো আকাশ ভেঙে পড়বে। বুধবার বরিশাল অঞ্চলে তাপমাত্র রেকর্ড হয়েছে ৩৫ দশমিক ০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই তাপমাত্রা নিচে নামার কোন সম্ভবনা নেই। বরং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। ফলে পানি সংকট ও লোডশেডিং বরিশালের জনজীবনকে যে নাকাল করে তুলবে তা আর বুঝতে বাকি নেই।
কারণ বরিশাল সিটি (বিসিসি) কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রতিদিন শহরে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানির প্রয়োজন থাকলেও দিতে সক্ষম মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ লিটার। তা ছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ার কারণে বরিশাল শহরের গভীর নলক‚পগুলো থেকে পানি ওঠে না। ফলে শহরের বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বরিশাল শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া জানুকিসিংহ এলাকার বাসিন্দা হানিফ গাজী বলেন- তীব্র গরমে পানি ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সিটি কর্পোরেশন পানি সরবরাহ না করতে পারায় বাড়ির আঙিনায় একটি নলক‚প বসিয়েছেন। কিন্তু এই নলক‚পে বেলা ১১টার থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত পানি ওঠে না।
এমন বাস্তবতায় যুক্ত হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ২/১ বার করে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। এতে রোজা রেখে পুরোপুরি হাপিয়ে উঠেছেন বলে জানান তিনি।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন- শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামাল হোসেন। তিনি বলেন- রমজানের আগে লোডশেডিং কম থাকলেও এখন বেড়ে গেছে। পাশাপাশি পানি সংকট রয়েছে। এমন পরিস্থিতি কাঠফাটা রোদ ও ভাপসা গরম জনসাধরণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বরিশালসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও একইভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিং দেখা দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে বরিশাল ওয়েস্টান পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে- এই অঞ্চলে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই।
পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার বলেন, বরিশাল গ্রিড সাবস্টেশনের আওতায় বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি এবং পুরোনো ২০টি ট্রান্সফরমারের কারণে সমস্যা হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে লাইন বন্ধ করে কাজ করতে হয়। কিন্তু তখন গ্রাহকেরা ভাবেন, লোডশেডিং চলছে। অন্য দুটি গ্রিড সাবস্টেশন এবং এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও একই কথা বলছেন।
তবে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন- ‘বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তাদের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সমান তালে লোডশেডিং চলছে। তাহলে বুঝে নিতে হবে, বিদ্যুৎ বিভাগ আসল তথ্য দিচ্ছে না। হতে পারে বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি তারা কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে।’