গত কোরবানির ঈদে ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে’-এ অজুহাত দেখিয়ে কমানো হয়েছিল চামড়ার দাম। তবে এ বছরেও চামড়ার দামে ভাটা পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছরই একটি সিন্ডিকেট কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। সরকারও যেন ওই সিন্ডিকেটে একরকম জিম্মি। যার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের চামড়ার দামেও।
বুধবার (২২ আগস্ট) সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক স্থান ঘুরে দেখা যায়, পানির দমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে এসব চামড়া।
এবার সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া নির্ধারণ করেছ ৪৫-৫০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা।
অথচ গতবছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকায় সংগ্রহ করেন। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হয়।
ঈদের নামাজের পরই শুরু হয় পশু কোরবানি। কোরবানির অধিকাংশ পশু জবাই করেন মাদরাসা, এতিমখানার ছাত্ররা ও মসজিদের ঈমাম। পশুর চামড়াও তাদের অনেকে ক্রয় করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
তবে কোরবানির ঈদে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য তুঙ্গে। তাদের কাছেই ধরাশায়ী হয়ে পানির দামে পশুর চামড়া বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা।
কল্যাণপুর দক্ষিণপাইকপাড়া লেকভিউ রোডে কমপক্ষে ৩০টি গরু ও ১০টি খাসি কোরবানি করা হয়েছে। সেখানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হকের সাথে। তিনি বলেন, ‘১ লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১৩শ টাকায়। এর বেশি দামে কেউই কিনতে চাইছে না। বাধ্য হয়ে বিক্রি করা।’
ওই এলাকায় চামড়া কিনতে আসা মৌসুমি ক্রেতা মিন্টু জানান, যত বড় ও ভালো চামড়াই কিনি না কেন, ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করতে পারব না। কারণ আমাদের লাভ সীমিত। যা লাভ ট্যানারি ব্যবসায়ীরা করে আসছেন।
মগবাজারের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, ৯০ হাজায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করা গেছে মাত্র ১২শ টাকায়।
রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, লালমাটিয়া, সাইন্সল্যাব, আজিমপুরে দেখা যায়, চামড়া বেচাকেনা চলছে। মূলত পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা এসব অস্থায়ী হাটে চামড়া কিনছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে চামড়ার দাম বেধে দিই। চামড়ার গ্রেডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রেডিং না বুঝেই শুধু সাইজ দেখে চামড়া কেনেন। এতে তাদের কেনা দামে হেরফের হয়।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশেও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান বিটিএর সভাপতি শাহীন আহমেদ।
তবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানি এলে চামড়া ও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সিন্ডিকেট করে দাম কমান। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত দুই মাসে চামড়ার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোরবানির চামড়ার প্রকৃত দাবিদার দেশের এতিম-মিসকিনরা। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে দাম কমানোয় তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।’