রেলস্টেশনের বিশ্রামাগারে উন্মুক্ত পাঠাগার

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বইপড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তা মানুষের মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্ক একটি গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ। শরীর সুস্থ রাখতে আমরা যেমন ব্যায়াম করি; তেমনই মস্তিষ্ককে সবল ও কর্মচঞ্চল রাখতে বইপড়া বিশেষ জরুরি। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বগুড়ার সোনাতলা রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের অবসর সময়ে বইপড়ার আনন্দ দিতে উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর উদ্যোগে আলোর প্রদীপের বাস্তবায়নে ‘যোগাযোগ’ নামে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়।

 

স্বাধীনতা দিবসে পাঠাগারটি উন্মুক্ত করেন সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন। এসময় অনলাইনের মাধমে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে পাঠাগারের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই। তিনি বলেন, ‘এ উদ্যোগে স্বশরীরে না থাকতে পারলেও ভিডিওকলে যুক্ত হয়ে অনেক আনন্দিত। এমন একটি উদ্যোগ সত্যি অনেক প্রশংসনীয়। আমার অবস্থান অনেক দূরে হলেও এ উদ্যাগের খবর পেয়ে এ কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করছি। আমি চাই মানুষ অবসর সময়টাকে বইপড়ার আনন্দের মধ্যদিয়ে উপভোগ করুক।’

সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘এমন একটি উদ্যাগের কথা যখন জানতে পারি; তখন আর না করতে পারিনি। ভেবেছি এমন একটি উদ্যাগে আমার থাকা উচিত। আসলে প্রযুক্তির কল্যাণে এখনকার প্রজন্মের অনেকেই বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে। আমরা আমেরিকা বা ইউরোপের দেশে এমন উন্মুক্ত পাঠাগার দেখতে পেলেও আমাদের দেশে প্রচলনটি এখনো শুরু করা যায়নি। আমি উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী ও আলোর প্রদীপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

 

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক সাজেদুর আবেদীন শান্ত বলেন, ‘আমি নিয়মিত বিভিন্ন কাজে সোনাতলা থেকে বগুড়া বা ঢাকায় যাতায়াত করি ট্রেনে। ট্রেন বিলম্ব হওয়ায় অবসর সময় পার করতে হয়। তখনই আমার মাথায় এলো, যদি এখানে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার করা যায় তাহলে ট্রেনের অপেক্ষমান যাত্রীরা বই পড়তে পারবেন। তারা অবসর সময় কাজে লাগাতে পারবেন। আলোর প্রদীপের সহযোগিতায় কাজটি শুরু করি। যারা আমাদের অর্থ, বই ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’

আলোর প্রদীপ সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন সজিব বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ বেশি বেশি বই পড়ুক। বই মানুষের মনকে পরিশুদ্ধ করে। সেই ভাবনা থেকেই যখন উন্মেষের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব আসে; তখন প্রস্তাবটি আমরা গ্রহণ করি এবং বাস্তবায়নের উদ্যাগ নেই। এটি বাস্তবায়নে সাজেদুর আবেদীন বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাকে ধন্যবাদ। মানুষ অন্তত রেলের জন্য যে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেন; সেই সময়টা যাত্রী ছাউনিতে বসে বই পড়ুক। আনন্দে সময় কাটানোর মধ্যদিয়ে মনোজগতকে পরিশুদ্ধ করুক।’

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সোনাতলা উপজেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি মো. মহসিন আলী তাহা, লেখক ও প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন, ক্রিকপ্লাটুন বগুড়ার সমন্বয়ক রাশেদুজ্জামান রন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রবিউল ইসলাম, আলোর প্রদীপের সাবেক চেয়ারম্যান এম এম মেহেরুল, উই আর ওয়ান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফিরোজ কবির ফারুক, আলোর প্রদীপের সদস্য রাজিবুর রহমান শীতল, সাকি সোহাগ, আলী আহসান মুজাহিদ, আল শাহরিয়ার পাপ্পু, লেখক জামিল উদ্দিন প্রমুখ।

প্রচ্ছদপ্রবাসী এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলস্টেশনের ঘাস নিয়ে লাইভ করার পর এবার ট্রেনে ওঠার সময় নারী ও বৃদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফের ফেসবুক লাইভ করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা রেলে চলাফেরা করেন তাদের প্রতি কি একটু সহায় হবেন- এমন আহ্বান জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বউ-বাচ্চা, বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চান তা হলে বউ থাকবে কই আর মা-বাবা থাকবে কই। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। লাইভে এসে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির দূরত্ব দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘এই ট্রেনটাকে মিটার গেজ (পরে সংশোধন করে বলেন ব্রডগেজ) বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-প্ল্যাটফ্রম থেকে দূরত্ব বা উচ্চতা কত? ব্রিটিশ আমলের ট্রেনগুলো ছিল এমন। আপনারা (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) নতুন ট্রেন আনলেন কিন্তু প্ল্যাটফর্ম এখনো পুরনো।’ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত লোকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন সবাই, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা দোতলার সমান। কোনো স্টেশনে ট্রেনটি তিন মিনিট থামে। তিন মিনিটে ৫০ জন মানুষ প্রায় দুই তলার সমান উচ্চতায় ওঠা কি সম্ভব?’ রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলমন্ত্রী, ট্রেন আপনি অনেক উঁচু বানিয়ে দিছেন। আর প্ল্যাটফর্ম এখানে বিট্রিশ আমলের। আমি কমলাপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলছি। আর গ্রামের স্টেশনগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। সেখানে ট্রেনে উঠতে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ওঠা একটা বে-ইজ্জতের কারবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়া এগোচ্ছে, সব কিছু এগোচ্ছে। রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ব্রেইনে আনেন পরিবর্তন করার। আপনারা বউ-বাচ্চা লইয়া ট্রেনে যাতায়াত করবেন কি-না জানি না। তবে, এই প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের সমান করতে কোটি কোটি টাকার দরকার পড়বে না। আশা করি রেলমন্ত্রীসহ সকলেই এর প্রতি সদয় হবেন।’ এর আগে (৩০ মে) ব্যারিস্টার সুমন স্টেশনের সামনে রেললাইনের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস কেটে পরিচ্ছন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ দেন। এর পরদিনই (শুক্রবার) সেসব ঘাস কেটে পরিষ্কার করে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি দেখেন, রেললাইনের ওপর বড় বড় ঘাস জন্মেছে। যা কাটার জন্য কারো সময় নেই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলের সময় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মোটামুটি ভালোই চলতেছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’ ওই লাইভে তিনি আরও বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। এটা কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। এ সময় তিনি এক হাত লম্বা লম্বা ঘাস দেখিয়ে বলেন, ‘কিছু লোক লাগিয়ে ঘাসগুলো পরিষ্কার করলে স্টেশনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।’
৬ years ago