স্কোরলাইন আর খেলার চালচিত্রই বলে দিচ্ছে শুধু ব্যাটসম্যানরাই নন, লঙ্কান বোলাররাও বাংলাদেশের বোলারদের চেয়ে অনেক ভাল বোলিং করেছেন। পেসার সুরাঙ্গা লাকমালের কথা না হয় বাদ থাকলো। বাংলাদেশের তিন স্পিনারের চেয়ে শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা ঢের ভাল বোলিং করেছেন। যেখানে লঙ্কান স্পিনারদের ঝুলিতে জমা পড়েছে ৬ উইকেট, সেখানে আজ অবধি দেড় দিনে ১৩৮ ওভারের মধ্যে ১১৩ ওভার বল করে মাত্র দুই উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।
একমাত্র পেসার মোস্তাফিজুর রহমান করেছেন ২৫ ওভার (২৫-৫-৮৮-১)। এছাড়া বাকি ১১৩ ওভারের পুরোটা তিন জেনুইন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সানজামুল ইসলাম। দুই বাঁ-হাতি তাইজুল (৫১-১৩-১৪৪-১), সানজামুল (৩৭-২-১২৮-০) ও অফ স্পিনার মিরাজ (১৯-০-৯৭-১) এবং তিন অনিয়মিত স্পিনার মোসাদ্দেক (৩-০-২৪-০), মাহমুদউল্লাহ (১ ওভারে ৭), মুমিনুল (২ ওভারে ৬) মিলে চালিয়েছেন।
অন্যদিকে তিন লঙ্কান স্পিনারদের মধ্যে বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ (৩৭-২-১৫০-৩), অফ ব্রেক বোলার দিলরুয়ান পেরেরা (২৭-৪-১১২-১) ও বাঁ-হাতি চায়নাম্যান সান্দাকান (২২-১-৯২-২) ঠিকই ভাল জায়গায় বল ফেলে সমীহ আদায়ের পাশাপাশি সাফল্যও তুলে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের বোলাররা তা পারেননি। অফস্পিনার মিরাজ প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়ার পর আর নিজেকে খুঁজে পাননি। প্রায় ওভার পিছু ৫ রান করে দিয়েছেন। আর বাঁ-হাতি সানজামুলও ছিলেন চরম অকার্যকর।
সবচেয়ে শানিত স্পিন অস্ত্র সাকিব আল হাসান নেই। যে হাতে বল করেন, সেই বাঁ-হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল ফেটে মাঠের বাইরে এই বাঁ-হাতি। তার জায়গায় অনেক ঘটা করে টেস্ট শুরুর ৪৮ ঘন্টা আগে দিন বিমানে উড়িয়ে নেয়া হলো আরেক দেশ বরেণ্য বাঁ-হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাককে। প্রায় চার বছর পর রাজ্জাককে ডাকা দেখে মনে হচ্ছিলো এই মধ্য তিরিশ পার করা অভিজ্ঞ স্পিনারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিচ্ছে টিম ম্যানজমেন্ট; কিন্তু শেষ অবধি তাকে খেলানো হয়নি।
কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন বোলারদের ব্যর্থতার কারণে সারাদিন ঘুরে ফিরে সবার মনে হয়েছে, তাইজুল ও মিরাজের জায়গায় না হলেও আরেক বাঁ-হাতি সানজামুলের বদলে অনায়াসে খেলানো যেত রাজ্জাককে। সানজামুলের অকার্যকরিতায় তা আরও বেশি করে মনে হয়েছে। সবার মনে ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, তাকে যখন শেষ মুহূর্তে ডেকে ১৬ জনের দলে নেয়াই হলো, তাহলে রাজ্জাক কেন বাইরে? কেন তাকে খেলানো হলো না? তার অভিজ্ঞতাকে কি কাজে লাগানো যেত না?
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে অফিসিয়াল প্রেস মিটেও উঠলো সে প্রশ্ন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো, ডেকে নিয়েও রাজ্জাককে খেলানো হলো না কেন? কোন বিশেষ কারণ আছে কি? সুজন জবাবে অনেক কথার ভীড়ে যা বললেন, তার সারমর্ম হলো- রাজ্জাক অভিজ্ঞ। তারা জানেন। মানছেনও। তবু যেহেতু সানজামুল তাদের ট্রেনিংয়ের মধ্যে ছিলেন, তাই ভাবা হয়েছিল রাজাজাকের চেয়ে সানজামুলই ভালো করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ কোনো কারণ নেই। রাজ্জাক হয়ত ইন্টারন্যাশনাল ফিগার; কিন্তু আামাদের দলের সাথে ছিল না। অনেক দিন জাতীয় সেটআপেই নেই। যদিও রাজ্জাকের অভিজ্ঞতা নিয়ে কারও কথা বলার কিছু নেই। আমাদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। আমাদের বিশ্বাস হয়ত, সানজামুলের প্রতি বেশি ছিল। সে সেট আপে ছিল, ট্রেনিংয়ে ছিল জাতীয় দলের সঙ্গে। রাজ্জাকের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন নেই; কিন্তু আমরা চিন্তা করেছি যে সানজামুল হয়ত এই কন্ডিশনে আমাদের বেশি কিছু দিতে পারবে। হয়ত এটার জন্যই। অন্য কোনো কারণ নেই।’
তবে কি বিনা পরিকল্পনায় শুধু ‘আইওয়াশের’ জন্য রাজ্জাককে দলে নেয়া? খালেদ মাহমুদ সুজনের জবাব, ‘রাজ্জাককে নিয়ে অবশ্যই পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ করে নিয়ে আসা হয়নি। পরিকল্পনা করেই আনা হয়েছিল। তবে দল নির্বাচনে যখন আমরা বসেছি, অধিনায়ক ছিল- তখন আমরা চিন্তা করেছি রাজ্জাককে একটু সময় দেওয়া দরকার। আরেকটু কাজ করলে হয়ত ওর জন্য সহজ হবে।’