যেভাবে দেখা হচ্ছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ঢাকায় সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, অর্থ খরচ করে অস্ত্র কিনে কখনও শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। একমাত্র বন্ধুত্ব, সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। শান্তির জন্য অস্ত্রের পেছনে অর্থ খরচ কমিয়ে বন্ধুত্ব ও সংলাপের পথে বিনিয়োগ করতে হবে।

গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন জাওয়াদ জারিফ। তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

তিনি রেডিও তেহরানকে বলেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসলিম দেশগুলোর জনগণের মনের কথা বলেছেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চায়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সংঘাত নিরসনে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি।

জাওয়াদ জারিফের বক্তব্যের প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ইসলামী রাজনৈতিক দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ বলেছেন, এটা সত্যি যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অস্ত্রের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে তাদের সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করলে ওসব দেশ ভূস্বর্গে পরিণত হতে পারতো, উন্নত দেশগুলোর চেয়েও দ্রুত উন্নতি লাভ করতে পারতো ।

ঢাকা-তেহরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমেরিকা বা যেকোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক রাখবে, সেটা তার অধিকার। তবে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে সেটা ভিন্ন কথা।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে করেন জাওয়াদ জারিফ। এ সময় তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে যেকোনো সময় আলোচনায় বসতে রাজি আছে ইরান। কেন না, অস্ত্র দিয়ে আঞ্চলিক বা কোনো একক দেশের নিরাপত্তা আর শান্তি নিশ্চিত করা যায় না। আর প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্র বৈষম্য (আর্মস ইমব্যালান্স) থাকলে শান্তি আসে না। সামরিক শক্তি দিয়ে কখনও জয় লাভ করা যায় না। বিজয়ী হতে হলে রাজনৈতিকভাবে এগুতে হয়।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাওয়াদ জারিফ বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের যথাযথ সম্মান এবং পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া এই সংকটের একমাত্র সমাধান। এই সংকট সমাধানে বিশ্বকে দৃশ্যমান কাজ করতে হবে। মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার দিতে বাধ্য হয়।

ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় ২১ রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওআরএর (ইন্ডিয়ান ওসেন রিম অ্যাসোশিয়েশন) মন্ত্রী পর্যায়ের তৃতীয় সম্মেলন সম্মেলনে অংশ নিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বাংলাদেশ সফর করছেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। সম্মেলনে ২২টি সদস্য রাষ্ট্র ও ৯টি ডায়ালগ পার্টনারসহ ৩১টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।

সূত্র : পার্স টুডে