মোরশেদ আলম, যশোর প্রতিনিধি:: যশোরে স্বাস্থ্য শর্ত না মেনে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।সম্প্রতি যাত্রী তোলা বন্ধ করবেন, না ৯৯৯-এ ফোন করে অভিযোগ করবো, প্রতি সিটে যাত্রী থাকার পরও অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা শাপলা পরিবহনের এক যাত্রী কন্ডাক্টরের উদ্দেশ্যে এই কথা বলছিলেন। জীবননগর থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পর্যন্ত আসার পথে দুই একবার কন্ডাক্টরের সাথে বাকবি-তা হয় শাওন পারভেজ নামে ওই যাত্রীর। এই বাসের আর এক যাত্রী তানিয়া সুলতানার কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়ার সঙ্গে মালামালের ভাড়াও নেওয়া হয়। এই দুটি ঘটনা না, করোনাকালীন গণপরিবহনে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।
এছাড়া গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া ছবি শেয়ার করে পরিবহন শ্রমিকদের এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদেরই একজন মনিরুল ইসলাম। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, যশোর থেকে কেশবপুর পর্যন্ত বাস ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে প্রতি ডাবল সিটে একজন হিসেবে ৭৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে গাড়িতে উঠলাম। কিন্তু কোনো সিট ফাঁকা রাখা হলো না। ইঞ্জিন কভারেও ৬ জনকে ঠেসে ঠেসে বসানো হলো। দাঁড়িয়ে রাখা হলো কয়েকজন যাত্রীকে।
তাহলে করোনাকে পুঁজি করে জনগণের কাছ থেকে গণপরিবহনে এ ডাকাতি কেন? নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যাত্রী বলেছেন, করোনার ভুয়া পরীক্ষা ও ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ভিআইপি প্রতারক সাহেদ ও ডা. সাবরিনা যে অপরাধ করেছেন, করোনাকালে গণপরিবহণের মালিকদের যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অপরাধও তাদের চেয়ে কম নয়।
যশোর শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। হেলপাররা আগের মতো জোর করে টেনে টেনে যাত্রী তুলছেন। এসময় কোনো পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটানো হয় না। ২/১ বাসে অবশ্য পানি ছিঁটাতে দেখা গেছে। বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের হুড়োহুড়ি অবস্থা। এর বাইরে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে বাকবিতা চলছে প্রতিদিনই।
যশোর বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে বাস। যশোর থেকেও ছেড়ে যাচ্ছে বাস। তবে বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় নেই। টিকিট কাউন্টারগুলোতে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা কাজে আসছে না।
সরকারি নির্দেশনায় বাসে ওঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার কথা। তবে অনেক বাস কাউন্টারে নামে মাত্র স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। এসব স্যানিটাইজার ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না আগত যাত্রীরা। যাত্রী উঠানোর আগে তার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার যন্ত্র নেই কোনো বাসে।
অথচ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় অর্ধেক সিটে যাত্রী বহন, সবার মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ১২ দফা শর্তে করোনাকালীন বন্ধের ২ মাস পর পহেলা জুন থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।
বেনাপোল থেকে যশোর আসা এক যাত্রী বলেছেন, খুব জরুরি কাজ আছে, তাই বাধ্য হয়েই বাসে উঠেছি। আসলে যেসব স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালন করা হচ্ছে না। কিছু কিছু বাসে দেখলাম যাত্রীরা অনেক হুড়োহুড়ি করে উঠছে। অনেকে বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে; আবার কেউ কেউ দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠছে। হেলপার গেটে দাঁড়িয়ে থাকায় ঘেঁষাঘেঁষি করে যাত্রীদের উঠতে হচ্ছে। এতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মূলত গণপরিবহনে ‘লোক দেখানো’ স্বাস্থ্যবিধি পালন চলছে।
যশোর-চুকনগর চলাচলকারী এক বাসের কন্ডাক্টর আজগর আলী বলেন, আমরা আগের মতই যাত্রী তুলছি। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছি দ্বিগুণ। কিভাবে চলছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ম্যানেজ করে চালাচ্ছি।
প্রায় একই কথা বলেছেন, যশোর বাস মালিক সমিতির এক নেতার সঙ্গে আলোচনা কালে তিনি বলেছেন, যে যশোর থেকে ১৮টি রুটে বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা যাওয়া পরিবহনগুলোতে সরকারি বিধি মেনে চলছে। তবে লোকাল পরিবহনগুলোয় যাত্রী গ্যাদারিং হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পুলিশের সাথে সমঝোতা করে গাড়ি চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করে।
যশোরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহাবুব বলেন, যখন টার্মিনাল থেকে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে তখন যাত্রী কম থাকে। কিন্তু রাস্তার মাঝে গিয়ে যাত্রী তোলে। এক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীরা বর্তমানে সচেতন হওয়ায় কিছু বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। যাত্রীরা বিভিন্ন জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করে। তখন আমরা টিম পাঠিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি আটক করে জরিমানা আদায় করি। তবে সমঝোতার বিষয়টি সঠিক নয়।