স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চর সোনাপুর গ্রামে দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে বাদীর বসতঘরে ঢুকে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করে নেয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার চার্জশিটভুক্ত তিন আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ফারুক হোসেন এ আদেশ দেন। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন বরিশাল জজ কোর্টের সহকারী সরকারি কৌশলী (এজিপি) এস এম শওকত জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন- জেলহাজতে যাওয়া আসামিরা হলেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ২ নং লতা ইউনিয়নের চর সোনাপুর গ্রামের মৃত সেকান্দার আলী হাওলাদারের পুত্র মো. হুমায়ুন কবির শাহীন (৪৫), মৃত সেরাজুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. সোহেল হাওলাদার (৪২) ও মো. হুমায়ুন কবির শাহীনের ছেলে মো. হৃদয় হাওলাদার (২২)। ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন চর সোনাপুর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে নিজাম তালুকদার (৫৫)।
দায়েরকৃত মামলা ও চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, ওয়ারেন্টভুক্ত ওই তিন আসামি ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে বাদী বিষয়টি দায়েরকৃত মামলার ১নং সাক্ষী মো. আছিবুর রহমান কেসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানান। এই ১নং সাক্ষী চট্টগ্রামে ব্যবসা করার সুবাদে তার চর সোনাপুর গ্রামে থাকা টিন সেট বসতঘরে বসবাস করতেন বাদি। একইসাথে ১নং সাক্ষীর কৃষি জমি দেখাশুনার পাশাপাশি চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করত মামলার বাদী।
হঠাৎ ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর বিকেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসামীরা দাবিকৃত ওই চাঁদার দাবিতে অটল থাকে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে আসামীরা বাদির বসতঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এসময় বাদি বাঁধা দিলে আসামীরা তাকে কিল, ঘুসি ও লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করে। পরবর্তীতে সকল ঘটনা তুলে ধরে বাদী ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালতের বিচারক বিচারক আফসানা শারমিন ইভা বরিশাল গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মো. আখতারুজ্জামান ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দায়েরকৃত মামলার ৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করলে বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে- আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩২৩/৪৪৭/৪৪৮/৩৮৫/৩৮৭/৪২৭/৩৭৯/৫০৬ (দ্বিতীয় অংশ) ধারা অপরাধ সংঘটনের প্রাথমিকভাবে সত্যতা মিলেছে। বাদী এজাহারের বর্ণনার ন্যায় বক্তব্য দিয়েছেন। যা ফৌ. কা : বি. ১৬১ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি করা হয়। তবে দায়েরকৃত মামলায় অজ্ঞাতনামা কোনো আসামিকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে “মেহেন্দিগঞ্জে বংশ নির্বংশ করার হুমকি এলাকা ছাড়া এক কৃষক” এমন তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ভুক্তভোগী কৃষক ও দায়েরকৃত মামলার বাদী মো. নিজাম উদ্দিন তালুকদার। তখন তিনি বলেছিলেন- দায়েরকৃত মামলার ১ নং আসামি মো. হুমায়ুন কবির শাহীন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ২নং লতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। গত ৫ আগস্টে আ.লীগ সরকারের পতনের পর এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সহ চাঁদার দাবিতে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।