‘মুভমেন্ট পাস’র ব্যবহার যেভাবে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চলাকালীন জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু করেছে পুলিশ। বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে লকডাউনে বিশেষ কয়েকটি কারণে এবং পুলিশের দেয়া ‘মুভমেন্ট পাস’ ছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যাবে না। এই পাস দেয়া শুরু করেছে পুলিশ। পাস দিতে একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে।

অ্যাপে আবেদনকারী কোথা থেকে কোথায় যাবেন, তা জানতে চাওয়া হবে। সেই সব তথ্য ধাপে ধাপে দিতে হবে। এরপর আবেদনকারীর একটি ছবি আপলোড করে আবেদন জমা (সাবমিট) দিতে হবে। ফিরতি বার্তায় আবেদনকারীকে পাঠানো হবে। সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট নেয়া যাবে। প্রিন্ট কপিটিই মুভমেন্ট পাস হিসেবে গণ্য করা হবে। একবার পাস নিলে তার সময়সীমা থাকবে তিন ঘণ্টা। অর্থাৎ, তারিখ ও সময় দেয়ার পর থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টা সময় গণনা শুরু হবে। এছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া ও বাইরে থেকে ঘরে ফিরে আসার জন্য লাগবে আলাদা মুভমেন্ট পাস।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে মুভমেন্ট পাস অ্যাপের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, করোনার টিকা গ্রহণ, মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচা বাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা, চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে নাগরিকেরা মুভমেন্ট পাস নিতে পারবেন। https://movementpass.police.gov.bd/ লিংকে ঢুকে মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। মুভমেন্ট পাস ক্লিক করে মোবাইল নম্বরটি প্রবেশ করাতে হবে। এরপর গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চলে যাবে। ওটিপি প্রবেশ করালে পাসের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মুভমেন্ট পাসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

যে থানা এলাকা থেকে যাবেন, যে থানা এলাকায় যাবেন, নাম, লিঙ্গ, বয়স, ভ্রমণের কারণ, পাস ব্যবহারের তারিখ ও সময়, পাসের মেয়াদ শেষের তারিখ ও সময়, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজস্ব গাড়ির তথ্য এবং ছবি এসব তথ্য দিতে হবে।

এই পাসধারী ব্যক্তি বাধামুক্তভাবে সড়কে চলাচল করতে পারবেন। তবে সবাই এই পাস পাচ্ছেন না। শুধু জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এই পাস। যিনি পাস পাবেন শুধু তিনিই এটি ব্যবহার করে কাজ করতে পারবেন। পাস নেয়ার সময় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে চাইলে আবেদনকারী সেটাও করতে পারবেন। পাস কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য না বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, অ্যাপটির উদ্বোধনের পর থেকেই আবেদনের হিড়িক পড়ে গেছে। প্রথম দিনে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওয়েবসাইটে কিছুটা চাপও সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাসের আবেদন জমা পড়ে ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৩০ হাজার আবেদন ইস্যু করেছে পুলিশ। অ্যাপটি উদ্বোধনের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ নাগরিক ওয়েবসাইটে হিট করে।

এদিকে, দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে মুভমেন্ট পাস অ্যাপের উদ্বোধনকালে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, মুভমেন্ট পাস ব্যবহার করে নাগরিকরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন। তবে এক মোবাইল নম্বর ও গাড়ি নম্বর দিয়ে একবারই পাস নেয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিনা প্রয়োজনে কাউকে রাস্তায় দেখতে চাই না। প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে এবং ঘরে ফিরে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন। আপনার মাধ্যমে যেন আপনার প্রিয়জন করোনায় সংক্রমিত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, হাতিরঝিলসহ অন্যান্য জায়গায় আপনারা জটলা করে আড্ডা দেবেন না। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনারা সন্তানদের ঘর থেকে বের হতে দেবেন না। যদি খুব দরকার হয়, তাহলে পাস নিয়ে নেন। পুলিশ বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকে পাস দেখান।

আইজিপি বলেন, লকডাউনের দিনগুলোতে অপ্রয়োজনীয় মুভমেন্ট বন্ধ করতে হবে। গত বছর সাধারণ ছুটি দেয়ার পর অনেকেই একসঙ্গে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সংক্রমণের শঙ্কা বাড়িয়েছেন। এবারও ঠিক তাই করছেন। আমি গ্রামের বাসিন্দাদের অনুরোধ করব, যারা ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন, তাদের আইসোলেটেড করুন। তারা যেন অন্যকে আক্রান্ত করতে না পারে।

সাংবাদিকদের মুভমেন্ট পাস লাগবে না

জরুরি প্রয়োজনে মুভমেন্ট পাস সাংবাদিকদের নেয়া লাগবে না। এই পাস শুধুমাত্র যারা কাজে বাইরে বের হবেন তাদের নিতে হবে বলে একই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

তিনি জানান, যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য অফিসিয়াল কিংবা জরুরি প্রয়োজনে মুভমেন্ট পাস নেয়া লাগবে। তবে এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের এই পাস নেয়া লাগবে না।

মুভমেন্ট পাস নিতে যা করতে হবে-

১. একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। সেই নম্বরে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে। সেটা দিতে হবে।

২. আবেদনকারীর জন্ম তারিখ দুই বার লিখতে হবে। জন্ম তারিখ যদি ০১-০২-১৯৯৪ হয় তাহলে ০১০২১৯৯৪ লিখতে হবে।

৩. আবেদনকারী যে এলাকায় বা থানার আওতায় বাস করেন তার নাম উল্লেখ করতে হবে।

৪. জরুরি প্রয়োজনে যে এলাকায় যাবেন সেই থানার নাম উল্লেখ করতে হবে। সেই সঙ্গে পুরুষ নাকি নারী সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

৫. আপনি যেহেতু জরুরি প্রয়োজনে বের হবেন, অবশ্যই সেই কাজের নাম উল্লেখ করতে হবে। ১৩টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতেও যদি আপনার প্রয়োজনটি উল্লেখ না থাকে তাহলে অন্যান্য অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। আপনার কাজটি শেষ করতে কত সময় লাগবে তা উল্লেখ করতে হবে।

৬. পাস পেতে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি ইস্টডেন্ট আইডি, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট নম্বর ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর জমা দিতে হবে।

৭. জরুরি কাজে বের হওয়ার সময়ে আপনার নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করবেন কি না সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যদি নিজের গাড়ি ব্যবহার করেন তাহলে গাড়ির নম্বর উল্লেখ করতে হবে।

৮. সবগুলো শর্ত পূরণের পরে আবেদনকারীর একটি সদ্য তোলা ছবি জমা দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আবেদনকারী ফিরতি বার্তায় পাস পেয়ে যাবেন।