মার্চে মন্ত্রিসভায় বরিশালের নানকসহ আরো নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে !

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো গঠিত সরকারের দুই থেকে আড়াই মাস পূর্ণ হওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যোগ হওয়ার আলোচনা চলছে।

আগামী মার্চ মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় অন্তত চার থেকে পাঁচজন যোগ হতে পারেন। নতুন সরকারের চমকের মন্ত্রিসভায় তাদেরকে দ্বিতীয় দফায় যোগ করে চমক দিতে চায় সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

সূত্র মতে, মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা যোগ হতে পারেন, এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, দলটির নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। নতুনরা কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন- এমন বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশও চলছে। আগের সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা ও নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কারো নতুন করে মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, এমন আলোচনাও চলছে।

আগের সরকারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন আর একাদশ সংসদে যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কারো মন্ত্রিসভায় নতুন করে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জোটের শরিক দলের কেউ দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নও অনেকের। প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের বর্তমান মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। শরিক দলের কাউকে এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, তা একান্তই দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়া হবে। সংবিধানই প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষমতা নিশ্চিত করে। মার্চ মাসে না হলে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যোগ হবে, এমন কথাও বলছেন আওয়ামী লীগের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা।

মন্ত্রিসভায় যাদের নাম নতুন করে যোগ হতে পারে, তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি কিশোরগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

গত ৩ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। সৈয়দা লিপিকে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আপাতত থাকছে ছয়টি মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও আছে।

মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার বিষয়ে জোর প্রচারণা আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নাম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (১৯৯৬-২০০১) সাবেক একান্ত সচিব। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন এ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। নৌপরিবহন, পানিসম্পদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে কেউ এখনো শপথ নেননি। তাকে ঘিরে এ তিন মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে।

সূত্র মতে, মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আসছে- এমন আলোচনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ছয়জন নেতা বিশেষভাবে এগিয়ে আছেন। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মেসবাহ উদ্দিন ও বাহাউদ্দিন নাছিম। তাদের সম্মানিত করা হবে বলে ইতোমধ্যে দলের এক যৌথসভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই জানান।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভা গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ওই ছয় নেতার নির্বাচনে অবদান প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তারা ছয়জন একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন। যৌথসভায় উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জবাবে বলেন, তাদের (ছয়জন নেতা) সম্মানিত করা হবে।

দলীয় প্রধানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলের নীতিনির্ধারকরা ধরে নেন, ওই ছয়জনের মধ্যে ‘টেকনোক্র্যাট কোটায়’ এক বা একাধিকজন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন। মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পেলে তারা দলের আরো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। চলতি বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। তখন জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাদের দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দিয়ে চমক দেখাতে পারে আওয়ামী লীগ।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে অন্যতম চমক ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নড়াইল-২ আসনে দলের টিকেটে বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন তিনি। মন্ত্রিসভায়ও মাশরাফিকে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার গঠন করতে পারলে মন্ত্রিসভায়ও তাকে রাখা হবে, মনোনয়ন দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা তাকে এমন প্রতিশ্রুতিও দেন বলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র জানায়।

মার্চে মন্ত্রিসভায় নতুন সদস্য যোগ হলে মাশরাফির শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আরেকটি সূত্র জানায়। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি শপথ নেবেন- এমনটিই ভাবা হচ্ছে। এখন মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পেলে আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলায় কোনো প্রভাব পড়ে কি না, সেজন্যই এমনটিই ভাবা হচ্ছে। চলতি বছরের ৩০ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে।