মাতালো কনসার্ট ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ কনসার্টে গানে গানে কিছুটা সময় মেতে থাকলেন দর্শকরা। সোমবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই কনসার্টের আয়োজন করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয় কনসার্ট। সুর মাধুর্য নিতে দুপুর থেকেই তরুণ-তরুণীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভিড় জমাতে থাকেন। সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

কনসার্টে বিভিন্ন উপস্থাপনায় বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন রোকেয়া প্রাচী।

ম্যাজিক বাউলিয়ানা প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পী দিতি সরকার যখন গেয়ে ওঠেন ‘কারো রবে না এ ধন’ হৈ হৈ করে ওঠেন দর্শকরা। এরপর দর্শক মাতিয়ে তিনি পরিবেশন করেন- ‘কোন মিস্তরি নাও বানাইল, কেমন দেখা যায়’ ও ‘সাধের লাউ বানাইলি মোরে বৈরাগী’।

শিল্পী চন্দনা মজুমদারের ‘বেঁধেছে এমনও ঘর শূন্যের উপর’, ‘শোনা বন্ধু ভুইলো না মোরে’ এবং ‘যাও পাখি বলো তারে’- গান তিনটি হাজার হাজার শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রাখে।

শিল্পী পারভেজও মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের। তিনি ‘যাবি যদি উড়ে দূরে’, ‘বাজে বাংলাদেশের ঢোল’ গান দুটি পরিবেশন করেন।

শুরুতেই আসেন ফকির আলমগীর। তিনি ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘ভয় নেই কোনো ভয়’ ও ‘মুজিব আমার’ গেয়ে শোনান।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী ‘একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের’ ও ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নেই’ গান দুটি পরিবেশন করেন।

রথীন্দ্রনাথ রায় গেয়ে শোনান- ‘মুজিব বাইয়া যাওরে’ ও ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’। ‘মুক্তিযুদ্ধে গেছে বাজান সংগ্রামের বছর’ ও ‘তুই যদি আমার হইতিরে’- গান দুটি পরিবেশন করেন শিল্পী আবু বকর সিদ্দিক।

এক পর্যায়ে পারফর্ম করতে আসে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুট। এই ব্যান্ডেল ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমি ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান- ‘মরে যাব’, ‘এই শহরে’, ‘আমি খাজনা দেব না’, ‘আহারে জীবন’, ‘কানামাছি’ গেয়ে হাজার হাজার দর্শককে মাতিয়ে রাখেন।

c

চিরকুটের পরিবেশনায় মাঠভর্তি তরুণরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ডালিয়া আহমেদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচারিত চরমপত্র পাঠ করে শোনান।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চসহ বিভিন্ন সময়ের দেয়া বক্তব্য দেখানো হয়। ‘দুর্গম পথের এক দুঃসাহসী যাত্রী শেখ হাসিনা’ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে দুটি তথ্যচিত্র প্রচার করা হয় অনুষ্ঠানে।

শিল্পী মমতাজের সঙ্গীত পরিবেশনের কথা থাকলেও তিনি অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। রাত ১০টার দিকে সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান, মমতাজ ঢাকার বাইরে গেছেন। তিনি যানজটে পড়ে এখনও অনেক দূরে রয়েছেন। তাই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না।

পরে চিরকুট আরও একটি গান পরিবেশনের মাধ্যমে কনসার্ট শেষ হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মঞ্চের সামনে বসে কনসার্ট উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন, তার রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই কাজ যাতে তিনি অব্যাহত রাখতে পারেন আগামী নির্বাচনে আপনাদের সেটি ঠিক করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নাকি হায়নারা আবার পতাকা খামছে ধরবে- আগামী ডিসেম্বরে তরুণদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আজকের আয়োজনটি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। এটি আমরা নিবেদন করছি সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি। এই দিনটিতে যে শ্লোগানটি ধারণ করছি তা হলো- বিজয় নিশান উড়ছে ওই। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সর্বশেষ গান ছিল।’

‘এই বিজয়টি আমরা ধারণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মধ্যদিয়ে। শুধু তাই নয় গত সপ্তাহে আমরা জাতিসংঘ থেকে সেই সনদটি পেয়েছি যে আমরা উন্নয়নশীল থেকে পরিণত হয়েছে। এটিও আমাদের একটি বড় বিজয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এই বিজয়টি অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশের বিজয় অর্জন করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনীতির বিজয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছি। অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য আমরা এই দিনটিকে উদযাপন করছি বাংলাদেশের সকল মানুষকে নিয়ে। কারণ যে উন্নয়ন তাতে সব মানুষের অবদান রযেছে। তাদের সেই অবদানকেও আমরা স্বীকৃতি দেব।’

কনসার্ট আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ ও মিডিয়া পার্টনার ছিল দেশ টিভি।