পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা করলেন তিনি। আগামী ১০ জুলাই এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত বুধবারই মামলাটি আদালতে উঠেছিল। কিন্তু পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আবেদন প্রত্যাহার করে ফের ফাইল জমা করার নির্দেশ দেন কলকাতার হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা রাও। রাজ্যপালের করা মানহানি মামলাটি শুনানির তালিকায় না থাকায় বৃহস্পতিবার বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী। তার পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির পরবর্তী দিন ঘোষণা করেন বিচারপতি।
কলকাতা হাইকোর্টের একটি সূত্র বলছে, রাজ্যপালের করা মানহানি মামলায় তৃণমূলের দুই হবু বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়াত হোসেন সরকার এবং তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষকেও যুক্ত করা হয়েছে।
আদালতে রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী জানান, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর করা একাধিক মন্তব্যে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মানহানি হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে একাধিক সংবাদপত্রের এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং ভিডিও ফুটেজ আদালতে হাজির করেন তিনি।
এরপর আইনজীবীর কাছে আদালত জানতে চান, যেসব সংবাদমাধ্যম থেকে আবেদনকারী এই খবর পেয়েছেন, মামলায় সেসব সংবাদমাধ্যমকে পার্টি করা হয়েছে কি না।
আইনজীবী বলেন, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে তা ইউটিউবে রয়েছে, যে কেউ সেটি দেখতে পারেন, শুনতে পারেন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে রাজ্যপালের ওএসডিসহ তিনজনকে ১৬০ ধারায় নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য ডাকা হয়েছিল।
এরপর বিচারপতি জানান, মামলা প্রত্যাহার করে ফের ফাইল করুন। নাহলে পদ্ধতিগত ত্রুটি থেকে যাবে। এরপরেই নতুন করে আবেদন করেন রাজ্যপালের আইনজীবী। তবে এই মামলায় তৃণমূলের আরও তিন নেতাকেও জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনে লড়াইয়ের পাশাপাশি বিধানসভার দুই আসনের উপনির্বাচন হয়। এই দুই আসনেই জয় লাভ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। ভগবানগোলায় জয়ী হন রেয়াত হোসেন সরকার ও বরাহনগরে সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায়।
তৃণমূলের এই দুই জয়ী প্রার্থীকে শপথগ্রহণের জন্য রাজভবনে পাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা যাননি। পরে গত ২৭ জুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় নবান্নে এক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সবাই কেন রাজভবনে যাবে? রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে।
মমতার এই মন্তব্যের সময় দিল্লিতে ছিলেন সি ভি আনন্দ বোস। সেখান থেকেই থেকেই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। রাজ্যপাল বলেন, একজন প্রশাসনিক প্রধানের কাছ থেকে তিনি এমন বিভ্রান্তিকর এবং অবমাননাকর মন্তব্য আশা করেন না।
ওইদিনই মমতার বিরুদ্ধে মানহানি মামলার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন, সব সীমা অতিক্রম করেছেন মমতা ব্যানার্জী। বারবার আমার নামে মিথ্যা বলছেন। তিনি আমার চরিত্র হনন করছেন। এটি মেনে নেবো না।
পশ্চিমবঙ্গে এটাই প্রথমবার পদে থাকা অবস্থায় কোনো রাজ্যপাল ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলেন।