ভালো ফলেও উচ্চশিক্ষায় ‘বাধা’ ভর্তিযুদ্ধ

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

কলেজের গণ্ডি শেষে ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনের বড় স্বপ্ন। সে কারণে অনেকে ভর্তি প্রস্তুতিমূলক কোচিংয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অধিক হারে বেড়ে যাওয়ায় শীর্ষ পর্যায়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। সে কারণে ভালো ফলাফল করেও কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে চিন্তিত অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।

২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ সর্বোচ্চ ফল (জিপিএ-৫) পেয়েছেন। দেশের ১১টি শিক্ষাবোর্ডে পাস করেছেন ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। অথচ সারাদেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৬০ হাজারের মতো। সরকারি মেডিকেল কলেজে এ সংখ্যা তিন হাজারের সামান্য বেশি। ফলে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান হবে না। এর সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীও রয়েছেন। ফলে এ বছর প্রায় সোয়া এক লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত) পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

এ বছর এইচএসসির ফলাফল তুলনামূলক বেশ ভালো হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থীরা। ভালো ফলাফল করেও পছন্দের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন কি না- এ নিয়ে চিন্তিত তারা। কারণ ভালো ফলাফল হওয়ায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে বাড়বে প্রতিযোগিতা।

ভর্তির এ যুদ্ধে যারা বাদ পড়বেন তাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি-বেসরকারি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান মিলে সারাদেশে ১৫ লাখের মতো আসন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), জাতীয় শিক্ষা তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (ব্যানবেইস) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মোট অনার্স কলেজ ৮৮১টি। এর মধ্যে সরকারি ২৬৪টি এবং বেসরকারি কলেজ ৬১৭টি। এসব কলেজে প্রথমবর্ষে মোট আসন সংখ্যা প্রায় আট লাখ ৭৩ হাজার। এর মধ্যে ডিগ্রি (পাস) কোর্সে প্রথম বর্ষে মোট আসন সংখ্যা চার লাখ ২১ হাজার ৯৯০টি। সারাদেশে মোট এক হাজার ৯৬৯টি কলেজে ডিগ্রি কোর্স চালু আছে।

এদিকে, স্নাতক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৬০ হাজার আসন।

 

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কলেজগুলো বাদে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন প্রায় ৬০ হাজার। অনুমোদিত ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৬টির কার্যক্রম চলছে। সেখানে স্নাতক পর্যায়ে প্রায় দুই লাখ তিন হাজার ৬৭৫টি আসন আছে। সব মিলিয়ে এ পর্যায়ে প্রায় ১৫ লাখের মতো আসন রয়েছে।

যদিও এইচএসসি পাসের পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রথম লক্ষ্য থাকে সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়া। ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তবে আসন স্বল্পতায় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় সিংহভাগ মেধাবীর।

জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, সব শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষায় যেতে হবে এমনটা কোনো দেশে নেই। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এটি পরিবর্তনে আমরা বার্ষিক প্রতিবেদনে সুপরিশ করেছি। সেটি রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পড়বেন, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, সরকারি-বেসরকারি কলেজ আবার কেউ বিদেশে পড়তে যাবেন। সব মিলিয়ে পাস করা সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন। প্রতি বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোতে অনেক আসন খালি থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আসন আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেওয়া, নেওয়া নয়। এটা করতে গিয়ে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে থাকে। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়াতে হবে।

এছাড়াও পর্যাপ্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, যোগ করেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।