ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর কঠোর সমালোচনায় সাংসদরা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের অভিযোগের মধ্যেও প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন একাধিক সংসদ সদস্য।

মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রথম দিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ বিষয়ে সমালোচনায় মুখর হন।

এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

সাংসদরা ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ না কমিয়ে ১ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেন। এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায়ও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য মঙ্গলবারের বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর পক্ষেও একজন স্বতন্ত্র সাংসদ পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের সাংসদ নাজমুল হক প্রধান বলেন, ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার ব্যাংককে টাকা দেওয়া হচ্ছে। একবার ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে; একবার করের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এভাবে হয়তো ব্যাংক রক্ষা করা যাবে, কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ হবে না। ব্যাংক থাকবে, অর্থনীতি কলুষিত হবে। এক মণ দুধে এক ফোঁটা টকই যথেষ্ট। তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর আড়াই শতাংশের জায়গায় ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ মোহাম্মদ নোমান বলেন, রাষ্ট্র ব্যাংককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। ব্যাংক কাদের টাকা দিচ্ছে? কেন জবাবদিহি নেই? জনগণের টাকায় কেন ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে?

নোমান রাস্তাঘাটের দুরাবস্থা নিয়েও সরকারের নীতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা আসলেই বেহাল। যে কাজ এক বছরে করা যায়নি, তা কীভাবে এক সপ্তাহে করা যাবে?

জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ব্যাংক খাতে যে লুট হয়েছে, তা নাদির শাহের দিল্লি লুটের সময়ের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করেন তিনি।

শামীম হায়দার বলেন, ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই ভাগ কমানো হয়েছে, কিন্তু অন্য করপোরেট খাতে ৪০ শতাংশই রাখা হয়েছে। যে খাত ভালো করছে, সেখানে কর কমানো হয়নি। যে খাতে লুটপাট হচ্ছে, সেখানে কর কমানো হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে শামীম হায়দার বলেন, ‘দুষ্টু বিড়ালকে কুকি দিলেন, পরের দিন দুষ্টু বিড়াল কিন্তু দুধ চাইবে। আর ভালো বিড়ালকে রিওয়ার্ড দিলেন না।’

তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে, যে কারণে ব্যয় বেড়েছে। উন্নয়নে বরাদ্দ কমছে।

বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হওয়ার আগে তাহজীব আলম সিদ্দিকী পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ব্যাংক খাত সত্যিকার অর্থে যতটা নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কিছু অযাচিত মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ এই খাতকে আরও দুর্বল ও অস্থিতিশীল করছে। অর্থমন্ত্রীর অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে তিনি একজন নীতিবান ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি। তার সঙ্গে ব্যাংক খাতের অনিয়মে জড়িতদের সংশ্লিষ্টতা নেই। জাতীয় পার্টির সদস্যরা অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। তিনি তাদের মন্তব্য প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বানের সমালোচনা করে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য হবে? বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের সঙ্গে? স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য হতে পারে না।

বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ঐক্য গড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বদরুদ্দোজা নয়, এর পেছনে আরও অনেকে আছে। এরা ষড়যন্ত্র করছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে শুধু বৈঠকই করেননি, ভূরিভোজও করেছেন। ওখানে বসে উনি যে ষড়যন্ত্র করছেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি এখন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশবাসী আগামী নির্বাচনেও এদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।

অন্যদের মধ্যে আরও আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, এনামুল হক, ইসরাফিল আলম, কাজী রোজী প্রমুখ। বৈঠকটি ছিল ঈদের আগে চলতি অধিবেশনের শেষ বৈঠক। আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে।