বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাজধানীর শাহবাগসহ ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছে। দুপুর সোয়া দুইটায় বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে কেউই সড়ক থেকে সরে দাঁড়ায়নি।
দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে চারদিন ধরে ঢাকার রাস্তায় অবরোধ করে আসছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব। তাদের বিচারের দাবিতে সেদিন থেকেই রাজপথে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) ও ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এ ছাড়া মহাখালী-গুলশান ১ নম্বর সড়কে অবস্থান করেছে ব্র্যাকের শিক্ষার্থীরা।
আর শান্তিনগর ও বেইলি রোডের সড়কে অবস্থান নিয়েছে ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ছাত্রীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কাকরাই থেকে মালিবাগের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
বুধবার পুরো ঢাকা অচল করে ফেলে শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেয়া গেছে, যাত্রাবাড়ী, বিমানবন্দর, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্পটে ৫-৬ জন শিক্ষার্থী গ্রুপ করে চালকের লাইসেন্স যাচাই করছে। এ সময় মোটরসাইকেলে ৩ জন বসা থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের নামিয়ে দিতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরায় সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্ররা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একটি বাস থামিয়ে ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চায়। তবে ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হলে তারা বাসটিকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে। বাসের ডানপাশে স্প্রে রং দিয়ে ‘লাইসেন্স নাই’ লিখে দেয়।
দনিয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের ধাওয়া
এদিকে শনি আখড়ার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দেয় সাদা পোশাকের কয়েকজন কর্মী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ তাদের কিছুই বলেনি। এ ছাড়া শনি আখড়ায় একটি পিকআপ চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের গুঞ্জনে আবারও উত্তাল হয় রাজপথ। তবে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) কিংবা যাত্রাবাড়ীর কোনো স্থানীয় হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই বলে দাবি করেছে পুলিশ।
চারদিনের এমন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। অপরদিকে দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার জাবালে নূর গাড়ির চালক মাসুম বিল্লাহকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার গাড়ির চাপাতেই ওই দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।
শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানিয়েছিল। তাদের এই দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আর এমন পরিস্থিতির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নথি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। বুধবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন।