 
                                            
                                                                                            
                                        
তাদের দিনগুলো কেটে যায় বাবা মার স্নেহ ভালোবাসা বিহীন। চকলেট, আইসক্রিমের আবদার করতে পারে, এমন কেউ নেই। দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে তাদের আর কোন জীবন নেই। স্বজনহীন এই মেয়েগুলোর জন্য গত কয়েকটা দিন ছিল ভীষণ অন্যরকম। উৎসবের আমেজে ভরপুর ছিল তাদের সকাল, বিকাল, রাত। এতদিন তাদের সাথে থেকেছে, খেলেছে যে বড় আপু, তার যে বিয়ে হচ্ছে মহা ধুমধামে! তাইতো নতুন পোশাক আর নতুন সাজে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল সিলেটের রায়নগর সরকারি শিশু পরিবারের মেয়েরা।
১০ বছর ধরে তাদের সাথে ছিল বিপাশা আক্তার মুন্নি। কারো সমস্যা হলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত। কোন ঝগড়াঝাঁটি হলে সেটিও মিটমাটের দায়িত্ব পড়ত তার উপর। বৃহস্পতিবার রাতে ধুমধামে পালন করা হয় বিপাশার গায়ে হলুদ। শুক্রবারও সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত ছিল শিশু পরিবারের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। শত শত অতিথি আসবেন। তাই সাজানো হয় পুরো শিশু পরিবারকে। বিশাল শামিয়ানা টানিয়ে হয় খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। জুমআর নামাজের পর পরই আকদ সম্পন্ন হয়। বিকেলে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জের আব্দুল লতিফের হাতে তুলে দেন বিপাশাকে।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নিবাসীকে যেন এভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। আর এজন্য সব ধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত সিটি করপোরেশন।’
বিয়েতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান, সিলেটের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান হিরো, পুলিশ সুপার মনিরম্নজ্জামান, সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, এসএমপির ডিসি নর্থ ফয়সল মাহমুদ, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক নিবাস রঞ্জন দাস প্রমুখ।
এ ব্যপারে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক নিবাস রঞ্জন দাস বলেন, বিপাশার বিয়ে নিয়ে আমরা অনেকটা চিন্তিত ছিলাম। এভাবে সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, সেটি বুঝতে পারিনি। একলক্ষ টাকা দেনমোহরে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বুড়াখালী রাজনগর (হালেয়া) গ্রামের মৃত আব্দুল আহাদের ছেলে আব্দুল লতিফের সঙ্গে শিশু পরিবারের নিবাসী বিপাশার বিয়ে হয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এই কামনা থাকল। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় ৪’শ অতিথিকে আপ্যায়ন করানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রায় বছর দশেক আগে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ভবঘুরে অবস্থায় বিপাশাকে পায় পুলিশ। নিজের নাম ও বাবা জামাল উদ্দিনের নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারেনি সে। এরপর থেকেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে বিপাশা। প্রথমে তার ঠাঁই হয় নিরাপদ হেফাজতে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটের রায়নগর সরকারি শিশু বালিকা পরিবারে।
১৯৭২ সালে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামের সংগঠনটিই ২০০৪ সালে নাম বদলে হয় রায়নগর সরকারি শিশু পরিবার। বর্তমানে প্রায় ১০০ অসহায় শিশুর আশ্রয়স্থল সেটি। লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি হাতের কাজ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে কাজ করছে এ সংগঠন। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এখানে থাকতে পারে শিশুরা। এর আগেও এখান থেকে অনেকের বিয়ে দেওয়া হলেও বিপাশার বিয়েটিই এ পর্যন্ত সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে বলে জানিয়েছেন শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ।