ঢাকা: ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, শনিবার :: বিদায়ী জানুয়ারী মাসে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত, ৮৯৯ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৪৪ টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত, ৭৮ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৩ টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত, ০১ জন আহত এবং ০৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৫০ টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জন নিহত এবং ৯৭৮ জন আহত হয়েছে। এ মাসে ২১৪ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৫ জন নিহত, ১১৪ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ ০৪ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকালে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিগত ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসের চেয়ে বিদায়ী ২০২৩ সালে জানুয়ারী মাসে সড়কে দুর্ঘটনা ৫.৩ শতাংশ ও দুর্ঘটনায় আহত ১০.০৪ শতাংশ বাড়লেও প্রাণহানী ৪.৬ শতাংশ কমেছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ২০৬ জন চালক, ১০৯ জন পথচারী, ৩৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৩ জন শিক্ষার্থী, ১০ জন শিক্ষক, ১৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১১৫ জন নারী, ৬২ জন শিশু, ০৫ জন সাংবাদিক, ০১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০২ জন আইনজীবী ও ০৩ জন প্রকৌশলী এবং ১৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছে ০৯ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ০৬ জন পুলিশ সদস্য, ০১ জন বিজিবি সদস্য, ০২ জন আনসার সদস্য, ১৫৩ জন চালক, ৮৪ জন পথচারী, ৮০ জন নারী, ৪৬ জন শিশু, ৪৬ জন শিক্ষার্থী, ২৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ০১ জন সাংবাদিক, ০৯ জন শিক্ষক, ০২ জন প্রকৌশলী, ০২ জন আইনজীবী ও ০৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৮১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১২.৫ শতাংশ বাস, ২৪.৭৫ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫.০২ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৫.৮৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২৭.৩২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.৫৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৯.৯২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫১.৬০ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২.৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১.৯৭ শতাংশ বিবিধ কারনে, ০.৬৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ১.০১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৯.৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮.৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪.৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ১.০১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
বিদায়ী জানুয়ারী মাসে,
সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারী, এই দিনে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ০২ জানুয়ারী, এই দিনে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ১১ জানুয়ারী, এই দিনে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ০৫ জানুয়ারী, এই দিনে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ : ১। বেপরোয়া গতি। ২। বিপদজনক অভারটেকিং। ৩। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল। ৪। যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা। ৫। চালকের অদক্ষতা। ৬। চালকের বেপরোয়া মনোভাব। ৭। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার। ৮। মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো। ৯। রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা। ১০। ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা । ১১। ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি। ১২। সড়কে চাঁদাবাজি। ১৩। রাস্তার পাশে হাট-বাজার। ১৪। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো। ১৫। চালকের নিয়োগ ও কর্মঘন্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা। ১৬। দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারনে সড়ক দুর্ঘটনা বেপরোয়াভাবে বাড়ছে।