বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর মাধ্যমে ২০২৪ এর ৫ই আগষ্ট পতন ঘটে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের। তারপর দেশের পরিবর্তন এর স্বপ্ন নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর শীর্ষ নেতৃত্ব প্রদানকারী নেতাদের সমন্বয়ে প্রকাশ পায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি। শুরু থেকেই তারুণ্য নির্ভর রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত পেয়েছে এনসিপি।জনমানুষের কাছে যখনি গ্রহনযোগ্য হবার দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি, ঠিক সেই মূহুর্তে দলের কিছু স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণকারী নেতৃবৃন্দের কারণে স্থানীয় নেতাদের কাছে বিতর্কিত হচ্ছে দলটি।
জুনের ৩ তারিখ এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর স্বাক্ষরিত বরিশাল জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশিত হয়। ২৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে ১০ জনই যুগ্ম সমন্বয়কারী।
তালিকায় প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দেওয়া হয় আবু সাঈদ মুসাকে।যিনি এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য এবং বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।
কমিটিতে চমক দেখা যায় ২নং যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান শিকদার এর নাম দেখে। আব্দুল হান্নান শিকদার বিগত স্বৈরাচারী আমলে বরিশাল সদর পাঁচ আসন থেকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। যেখানে মাত্র ৩০০ ভোট পেয়ে জামানত হারান।গত ঈদুল ফিতরে এনসিপির উপদেষ্টা পরিচয়ে বরিশালে ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা করলে পরবর্তীতে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে জানা যায়, এনসিপির কোন উপদেষ্টা পর্ষদ ই তৈরি হয়নি।তাহলে কেন এই হান্নান শিকদার নিজেকে উপদেষ্টা পরিচয় দেন? ঠিক সেই মূহুর্তে এনসিপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ করে, হান্নান শিকদার এনসিপির কেউ না। এ নিয়ে স্থানীয় এনসিপির নেতাদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই মূহুর্তে দেখা যায়, জেলা সমন্বয় কমিটিতে স্থান পায় হান্নান শিকদারের নাম। এ নিয়ে এনসিপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক নেতারা বলছেন, এখনো ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা এই হান্নান শিকদার, যার জুলাই বিপ্লবে কোন ভূমিকা নেই।যাকে এখন পর্যন্ত এনসিপির কোন অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। তাহলে তিনি আমাদের নেতা হন কিভাবে?
যানা যায়, স্থানীয় নেতাদের সাথে কোনরকম আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন আবু সাইদ মুসা। যেখানে নিজেকে প্রধান সমন্বয়কারী করে বিতর্কিত লোকদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন আবু সাইদ মুসা।
যে কমিটিতে স্থান পায় ২৪ বছর বয়সী যুবক থেকে শুরু করে মাদক ব্যাবসায়ীদের মদদদাতা।
স্থানীয় এনসিপির নেতাদের অভিযোগ, এই কমিটি ঘোষণা করার পূর্বে কারো সাথে আলোচনা করা হয়নি।এমনকি কেন্দ্র থেকে বরিশালের এনসিপির নেত্রী ডা. মাহামুদা আলম মিতু জানেননা এ কমিটি সম্পর্কে। আবু সাইদ মুসা তার নিকটাত্মীয় লোকদের নিয়ে একটি কমিটি ঘোষণা করেন। যারা কমিটির সদস্য হয়েছেন, তাদের ৩/৪ জন ব্যাতীত কাউকে চিনেনা স্থানীয় এনসিপির নেতারা।এছাড়া কখনো এনসিপির কোন পোগ্রামে দেখা যায়নি এসব নামধারী নেতাদের। আবু সাইদ মুসা টাকার বিনিময়ে এই লোকদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন।
স্থানীয় কয়েকজন এনসিপির নেতা বলেন, বরিশালে এনসিপির হয়ে কাজ করি আমরা।বিএনপির সাথে লড়াই করি আমরা, মাইর খাই আমরা।কিন্তু কোন অনুষ্ঠান হলে সেখানে সঞ্চালনা করেন মুসা, চেয়ারে বসেন মুসা, কমিটি করেন মুসা।অথচ যাদের নিয়ে কমিটি করেন, তারা বেশিরভাগ স্বৈরাচারীর দালাল এবং তারা কখনোই এনসিপির কোন পোগ্রামে আসেননি।একজন কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে তিনি সব পোগ্রামে সঞ্চালক হন।একক সিদ্ধান্ত নিয়ে বরিশালে এনসিপির ধ্বংসের মহানায়ক হবে এই মুসা।
আরেকজন সক্রিয় এনসিপির একজন সদস্য আরো অভিযোগ করে বলেন, মুসা সব কাজে তার একক সিদ্ধান্ত দেয়।তাকে কেউ কিছু বললে,তিনি বলেন, কেন্দ্রে বিচার দেন আমার নামে।আমি কেন্দ্রে বুঝবো।আর কেন্দ্রীয় নেতারাও স্থানীয় নেতাদের সাথে কোন আলোচনা না করে মুসার একক সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে কমিটি ঘোষণা করেন। এ কমিটি আমরা মানিনা।এই কমিটি বাতিল করা না হলে, এ কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে নামবো বলে জানান একাধিক নেতৃবৃন্দ।এ বিষয়ে অতিদ্রুত কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত চান বরিশালের এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।