অবশেষে পদত্যাগই করলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালনরত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কার্যালয় থেকে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। গত ২ অক্টোবর সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদের মতাবলে আপিল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগদেন রাষ্ট্রপতি। চাকরি বিধি অনুযায়ী চলতি বছর ১০ নভেম্বর তার অবসরে যাওয়ার কথা।
বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগপত্র পেয়েছেন কি-না, স্পষ্ট না করে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আজ ছুটির দিন তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে এমন কিছু পৌঁছার সম্ভাবনা নেই।’
বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকেই দেশের ২২ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। শেষের দিকে তার নিয়োগ অনেকটাই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছিল সূত্র গুলো। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পরই রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োদ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার দুই বছর পর ২০০১ সালের শুরুতে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব শুরু করেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলে আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতে রায় এসেছিল, ওই রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পে মত জানিয়েছিলেন বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা। যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের সময় একমাত্র বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার দ্বিমত ছিল। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা দণ্ড দিলেও তিনি দিয়েছিলেন খালাস।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্যনুসারে, আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি কর্মরত আছেন। চাকরি বিধি অনুসারে তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। সে হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা চলতি বছরের ১০ নভেম্বর অবসরে যাবেন। জামালপুরের প্রায়াত আবদুস সাত্তার মিঞা ও প্রায়ত সৈয়দা তাহেরা বেগমের ঘরে ১৯৫১ সালের ১১ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন আপিল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে এলএলবি পাশ করার পর ১৯৭৪ সালের ময়মনসিংহ জেলা বার ও ঢাকা জেলা বারে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ১৯৭৬ সালের ২ নভেম্বর হাইকোর্টে এবং ১৯৮২ সালের ১৪ জানুয়ারি আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে ১৯৮২-৮৩ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক এবং ১৯৮৮-৮৯ এবং ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।