বান্দরবানে নিহত ৮ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় সশস্ত্র দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত ৮ জনের লাশ পরিবার ও পাড়াবাসীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শনিবার (৮ এপ্রিল) ময়নাতদন্তের শেষে লাশগুলো পরিবার ও পাড়াবাসীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে খামতাংপাড়া থেকে  গুলিবিদ্ধ ওই আট জনের লাশ উদ্ধার করে রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ। পরে  সুরতহালে জন্য  লাশ গুলোকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছিল।

 

ওসি আবদুল মান্নান বলেন, গতকাল গ্রামবাসীদের তথ্যের ভিত্তিতে খামতাং পাড়া থেকে ৮টি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। আজ (শনিবার) ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো পরিবার ও পাড়াবাসীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, রোয়াংছড়ি খামতাং পাড়ায়  কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ সংস্কারপন্থী) মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। এতে খামতাং পাড়া ও আশেপাশের ৩টি খিয়াং পাড়ার ৯০টি পরিবারে ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে রুমা, রোয়াংছড়ি বাজার ও রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন।

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের (বিএসসি) সাধারণ সম্পাদক লাল থাং জেল বম বলেন, নিহতরা সবাই বম জনগোষ্ঠীর। তাঁদের মধ্যে ছয়জন রুমা উপজেলার জুরভারংপাড়া, একজন রৌনিনপাড়ার ও একজন রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইংখিয়াংপাড়ার বাসিন্দা।

নিহতদের নামের তালিকা অনুযায়ী জুরভারংপাড়া থেকে যারা নিহত হয়েছেন- লাল ঠাজার বম (২৭), সাংখুম বম (৪৫), ভানলাল দু বম (৩৫) , সান থির থাং বম (২২), বল রেম বম (১৭) ও লাললিয়ান ঙাক বম (৪৪)। এর মধ্যে লাল ঠাজার বম জুরভারংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরির কাজ করতেন। অপর জন হলেন- পাইংখিয়াং পাড়ার জিহিম বম (৪০)। অন্যজন রৌনিনপাড়ার বমরাম থাং বম বলে নিশ্চিত করেছেন লাল থাং জেল বম ।

 

লাল থাং জেল বমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ৭ জন হলো সাধারণ গ্রামবাসী এবং একজন সরকারি কর্মচারী।

রোয়াংছড়ি ও রুমা এলাকার গ্রামবাসীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিহত  ব্যক্তিরা বম সম্প্রদায়ের  জনগোষ্ঠীর হওয়ায় রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার অনেক বমপাড়াতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জুরভারংপাড়া, পাইংখিয়াংপাড়া, দুর্নিবার পাড়া, রামথার পাড়াসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া খামতাংপাড়ার আশপাশের পাড়াগুলোর বমরা অনেকে পালিয়ে আছেন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে জেলা ও উপজেলা সদরের আশপাশের পাড়াগুলোয় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) তরিকুল ইসলাম  বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতাদের মাধ্যমে দাফন করার জন্য  বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনো কোনো মামলা হয়নি। বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকায় নিহতদের নাম দেখা গেলেও আমারা এখনো নিহতদের নাম পরিচয় জানতে পারিনি।