রাজধানীতে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে যানজটের মাত্রা। অসহনীয় যানজটে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে রাজধানীবাসী। দিনে দিনে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ হচ্ছে। প্রতিদিন রাজধানীবাসীর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেমন কর্মসময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি কোটি কোটি টাকার লোকসানও হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ঢাকাতে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
যানজটের এসব দিক বিবেচনা করে যানজট কমাতে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সরকারী অর্থায়নে মোট ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
তারই ধারাবহিকতায় সবকিছু ঠিকঠাক করে টেন্ডারের মাধ্যমে রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্মাণ কাজে বাধা দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। তাদের দাবি জমির মূল্য ও বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ইউটার্নের কোনো কাজ করতে দেয়া হবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১১টি ইউটার্নের মধ্যে আটটিই পড়েছে সড়ক ও জনপথের জায়গায়। তাই কাজের শুরুতে তাদের এমন বাধায় প্রকল্পটির ভবিষৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১১টি ইউটার্নের কাজ শুরু করলে সওজ কর্তৃপক্ষ এসে নিজেদের জমির ক্ষতিপূরণ বিষয়টি উল্লেখ করে এটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। বর্তমানে তিনটি ইউটার্নের কাজ চলছে। বাকি ৮টিতে সওজের সঙ্গে জটিলতা থাকায় কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইউটার্ন নিমার্ণের জটিলতার বিষয়ে এই প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, এ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয় অনেক আগেই। সর্বশেষ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রকল্পের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিভিল এভিয়েশন এবং রেলওয়ের কিছু জমি ব্যবহৃত হবে, তখন কোনো টাকা-পয়সার কথা হয়নি। কিন্তু এখন সওজ তাদের ১ দশমিক ৩৬ একর জমির দাম চাইছে। পাশাপাশি যেসব স্থাপনা ভাঙা পড়বে সেগুলোর ক্ষতিপূরণও দাবি করা হচ্ছে। সে কারণে বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওসব ইউটার্ন নির্মান কাজ বন্ধ আছে।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রকল্পটি হাতে নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। সেসময় যেহেতু জমি তাদের থেকে কেনা বা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো শর্ত ছিল না তাই বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, খুব দ্রুত সমাধান পাব বলে আশা করছি।
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও সংস্থার সাথে সমন্বয় করে রাজধানীর যানজট নিরসনে ইউটার্ন প্রকল্প হতে নেয়া হলেও এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে তাদের জামির মূল্যসহ নানা রকম ক্ষতিপূরণ দাবি করায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র বলছে, ইউটার্ন নির্মাণে যেসব স্থাপনা ভাঙা পড়বে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দিলে কাজ শুরু করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাসমূহের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে ডিএনসিসিকে জানিয়েছে তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইউটার্ন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন সেবা সংস্থা, মেট্রোরেল প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়। এক পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সাথে সমন্বয় করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেবে সরকার। বাকি ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবে ডিএনসিসি। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
এসব ইউটার্ন নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, তিব্বত মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শেওড়া, কাওলা, উত্তরার র্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন এভিনিউয়ের সামনে।