বাংলা পানের চাষ যেন প্রায় বিলুপ্তির পথে

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা যেমন চা উৎপাদনে সন্মানীত দেশে বিদেশে তেমনি মনু নদীর তীরজুড়েই একসময় বাড়ৈ সম্প্রদায়ের পানের বরজ তৈরি করে পান চাষ করতেন। একসঙ্গে চাষ করতো লাউ মরিচ ও বেগুন পান চাষের সহায়ক ভূমিকা পালন করতো। সিলেটসহ মৌলভীবাজারের প্রবাসে বাস করাদের কাছে লন্ডনে যেতো এ বাংলা পান। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পান আসতে থাকায় কদর কমেছে বাংলা পানের। ফলে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ বিলুপ্তির পথে বাংলা পান।
পান চাষের সঙ্গে জড়িতরা জানান, বরজ তৈরির উপকরণ ছন, বাঁশ, বেত ও শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন পান চাষের আগ্রহ। পান চাষ ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন তারা। জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার মনু নদীর তীরের গ্রামগুলোতে বেশীরভাগ পানের বরজ ছিল। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু চাষি সুপারি গাছের পাতা দিয়ে বরজ তৈরি করে পান চাষ করছেন এখন।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ পর্যন্ত বাংলা পান চাষের জন্য কোনো প্রকার প্রকল্প নেই। জেলায় ২৫-৩০ একর ভূমিতে বাংলা পান চাষ হয়ে থাকে। নিজ উদ্যোগেই চাষ করেন তারা। আগে বাংলা পান চাষে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার অতপ্রতয় ভাবে জড়িত ছিল। বর্তমানে সংখ্যা কমে শতাধিক হয়েছে। এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয় ছিল। এ অঞ্চলে বাংলা পানের পরিকল্পিত চাষাবাদ ঘুরিয়ে দিতে পারে বাড়ৈ সম্প্রদায়ের ভাগ্যের চাকা। জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে ভূমিকা। পাশাপাশি প্রবাসে রপ্তানি করা সম্ভব হতো।
কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের কুড়িগ্রামের সুব্রত কর বলেন, ‘পান চাষ করে সংসারের চাকা খুরতো। বাংলা পান ধরে রাখার জন্য আমরা চাষ করি। কিন্তু এখন ছন, বাঁশ ও শ্রমিক না পাওয়ায় বরজ তৈরি করতে অনেক কষ্ট হয়। ৮ শতাংশের ভূমিতে ৩ বছর মেয়াদের একটি বরজ তৈরি করতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বছর মেরামত খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। লাভ হয় ৩০ হাজার টাকা।’
রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের টুপির মহল গ্রামের কোলনিশি দে বলেন, ‘পান বিক্রি করে একসময় অনেক লাভ হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় হাসিখুশিতে খরচ চলতো। অতীতে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পান চাষ হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানি করা যেতো। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় পানের চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে।’
টিলাগাঁও ইউনিয়নের চকসালন গ্রামের বাবুল দত্ত বলেন, ‘কোনো একসময় আমাদের গ্রামের শতভাগ মানুষ পান চাষের সঙ্গে অতপ্রতয় ভাবে জড়িত ছিলেন। বিগত ৫-৭ বছরে পানের দাম কমেছে। বাইরের পান আসায় পানের প্রকৃত মূল্য আমরা পাচ্ছি না। বর্তমানে ১৫-১৬ ভাগ মানুষ পান চাষ করছেন। সরকার উদ্যোগ নিলে হয়তো আবার পান চাষে মানুষ ফিরে যাবে।’ ঘুরে দাঁড়াতে পারে পান চাষিরা।
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মৌলভীবাজারে খাসিয়া পানের চাষ বেশি হচ্ছে। বাংলা পানের চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের জানামতে, ২৫ একর ভূমিতে বাংলা পান চাষ হয়। এ পর্যন্ত আমাদের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা পান চাষের কোনো রকম প্রকল্প আসেনি। কোনো সুযোগ আসলে আমরা বাংলা পান চাষিদের পাশে দাঁড়াবো।’ পাশাপাশি চাষিদের পান চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।
আন্তর্জাতিকপ্রচ্ছদলাইফস্টাইল এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলস্টেশনের ঘাস নিয়ে লাইভ করার পর এবার ট্রেনে ওঠার সময় নারী ও বৃদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফের ফেসবুক লাইভ করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা রেলে চলাফেরা করেন তাদের প্রতি কি একটু সহায় হবেন- এমন আহ্বান জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বউ-বাচ্চা, বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চান তা হলে বউ থাকবে কই আর মা-বাবা থাকবে কই। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। লাইভে এসে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির দূরত্ব দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘এই ট্রেনটাকে মিটার গেজ (পরে সংশোধন করে বলেন ব্রডগেজ) বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-প্ল্যাটফ্রম থেকে দূরত্ব বা উচ্চতা কত? ব্রিটিশ আমলের ট্রেনগুলো ছিল এমন। আপনারা (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) নতুন ট্রেন আনলেন কিন্তু প্ল্যাটফর্ম এখনো পুরনো।’ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত লোকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন সবাই, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা দোতলার সমান। কোনো স্টেশনে ট্রেনটি তিন মিনিট থামে। তিন মিনিটে ৫০ জন মানুষ প্রায় দুই তলার সমান উচ্চতায় ওঠা কি সম্ভব?’ রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলমন্ত্রী, ট্রেন আপনি অনেক উঁচু বানিয়ে দিছেন। আর প্ল্যাটফর্ম এখানে বিট্রিশ আমলের। আমি কমলাপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলছি। আর গ্রামের স্টেশনগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। সেখানে ট্রেনে উঠতে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ওঠা একটা বে-ইজ্জতের কারবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়া এগোচ্ছে, সব কিছু এগোচ্ছে। রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ব্রেইনে আনেন পরিবর্তন করার। আপনারা বউ-বাচ্চা লইয়া ট্রেনে যাতায়াত করবেন কি-না জানি না। তবে, এই প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের সমান করতে কোটি কোটি টাকার দরকার পড়বে না। আশা করি রেলমন্ত্রীসহ সকলেই এর প্রতি সদয় হবেন।’ এর আগে (৩০ মে) ব্যারিস্টার সুমন স্টেশনের সামনে রেললাইনের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস কেটে পরিচ্ছন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ দেন। এর পরদিনই (শুক্রবার) সেসব ঘাস কেটে পরিষ্কার করে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি দেখেন, রেললাইনের ওপর বড় বড় ঘাস জন্মেছে। যা কাটার জন্য কারো সময় নেই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলের সময় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মোটামুটি ভালোই চলতেছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’ ওই লাইভে তিনি আরও বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। এটা কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। এ সময় তিনি এক হাত লম্বা লম্বা ঘাস দেখিয়ে বলেন, ‘কিছু লোক লাগিয়ে ঘাসগুলো পরিষ্কার করলে স্টেশনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।’
৬ years ago