বরিশালের সফল পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামান বদলী হয়ে চলে গেলেন

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বরিশাল থেকে বদলি হলেন পুলিশ সুপার এস এম আকতারুজ্জামান। গত ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল তিনি বরিশালের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। বদলির আদেশপ্রাপ্ত হন চলতি বছরের ২৬ জুলাই। প্রায় দুই বছরাধিক তিনি তার নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের সদস্যগণসহ  জেলার সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন।তিনি বর্তমানে এআইজি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে যোগদান করবেন।

কর্মোদ্যোমে রাত-দিন ছুটে চলা এই কর্মকর্তার বদলির খবরে ভারাক্রান্ত সহকর্মী, অধীনস্থ সদস্যগণসহ সর্বমহল। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী তিনি বদলি হয়ে চলে গেলেন। কিন্তু বরিশালে তিনি রেখে গেলেন নানা স্মৃতি আর অভূতপূর্ব সৃষ্টিকর্ম। পাশাপাশি বরিশালের মানুষকে আবদ্ধ করে গেলেন কঠিন মায়ার জালে। জেলা পুলিশের প্রধান কর্মকর্তা হয়েও তিনি বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন ও অধঃস্তন সদস্যগণ ছাড়াও নিরহংকারী, নিরলসভাবে কাজ করে মন জয় করেছেন সর্বস্তরের মানুষের। এ যেন বিশেষ করে পুলিশ বিভাগের একজন কর্মকর্তার জন্য ব্যতিক্রমী অনেক বড় পাওয়া। বরিশালে যোগদানের পরপরই তিনি বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছিলেন জিরো টলারেন্স।

বলেছিলেন মাদকের সাথে যদি কোন পুলিশ সদস্যও জড়িত থাকেন; তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। বাস্তবেও তাই করেছেন তিনি। তিনি জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগদান করে মাদকের  বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন অভূতপূর্ব গণজাগরণ। বহু মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী তার কাছে আত্মসমর্পণ করে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে। তিনি তাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত  করেছেন।

 

পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামানের দুই বছরের কার্যকালে জেলার পুলিশ বিভাগের জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সাধিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রায় ৬০ লক্ষাধীক টাকা ব্যয়ে গ্রাটিচিউড হল,যা বরিশালের যেকোন সরকারী অফিসের অডিটোরিয়ামের চেয়ে বিলাসবহুল ও আধুনিক।ড্রিলসেড আধুনিকায়ন,জরার্জীন রেশন স্টোরকে আধুনিকায়ন,ভিআইপি  গেষ্ট রুম,পুলিশ লাইন্স মাঠের পাশে নয়নাভিরাম বেঞ্চ স্থাপন,বেশ কয়েকটি নতুন গাড়ী সংযোজন,দখল হতে যাওয়া পুলিশ ক্লাবের জমি কৌশলী ভুমিকা পালন করে পুনরুদ্ধারকরন ছিল তার অন্যতম বড় সাফল্য।পুরো পুলিশ লাইন সহ প্রত্যেকটি থানা এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা,পুলিশ সদস্যদের মনোরঞ্জনে নানাবিদ ব্যবস্থা গ্রহন

করা সহ উল্লেখযোগ্য শতাধিক উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধিত করেছেন পুলিশ অফিস, পুলিশ লাইন্সে। বরিশাল জেলা পুলিশের কর্নধার হয়েও সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সমাজ সেবার ইচ্ছায় অতান্ত্য গোপনীয়তা বজায় রেখে বিভিন্ন অসহায় ব্যক্তিকে চিকিৎসা , শিক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা করে পাশে দাড়িয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের চৌকষ এ কর্মকর্তা।বিষয়টি এতদিন তার ঘনিষ্ঠজন ও ডির্পাটমেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও  জানা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার সাদেক খাঁ কুমারিয়ারপিঠের গৃহ হারা ৭০ বছরের কুলসুম বেগম। ৫ জনের অভাবের সংসার চলছিল কোন রকম তার উপরগত ১৮মে অসহায় কুলসুমের এক মাত্র কুঁড়ে ঘরটি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তার পরিবারে৮০ বছরের বৃদ্ধ স্বামী আঃ কাদের, ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতনী। ৫ সদস্যের সংসার নিয়ে গৃহহীন হয়ে শুরুহয় মানবেতর জীবন যাপন। কি খাবেন কোথায় যাবেন ? ঘটনার কয়েকদিন পরে পুলিশ সুপার এস এমআক্তারউজ্জামান মূলাদী উপজেলায় যেতে স্থানীয় মীরগঞ্জ ঘাট থেকে ট্রলার যোগে মুলাদী নদীর পাড়েপৌঁছলে, কুলসুম বুঝে হোক আর না বুঝে হোক পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে তার অবস্থার বর্ণনা দিয়েআর্থিক সাহায্য কামনা করেন। কুলসুম ভেবেছিলেন হয়ত দু এক শত টাকা দিবেন কিন্তু না, তারধারনাকে পাল্টে দিয়ে পুলিশ সুপার যা করলেন তাতে কুলসুম বাক শূন্য হয়ে পরেছে। কুলসুমের কথায়পুলিশ সুপার  সংঙ্গে থাকা বাবুগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সালামকে দ্রুত কুলসুমের ঘরটি নতুন করে নির্মাণকরে দেবার নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক ওসি আব্দুস সালাম মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে কুলসুমের ঘরটিনির্মাণ করে দেন এবং নির্মাণে কাঠ মিস্ত্রী, কাঠ, টিনসহ যাবতীয় খরচ সম্পূর্ন ব্যক্তিগত তহবিল থেকেবহন করেন পুলিশ সুপার এসএম আক্তারউজ্জামান। এখানেই শেষ নয়,জানা গেছে এখন পর্যন্ত বিএম কলেজ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ  অনেক মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে তার কাছ থেকে ২০০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা পান।পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানা যায় এসপি আক্তারুজ্জামান ২০১৫ সালে উজিরপুরে এক বৃদ্ধার লাশ টাকার অভাবে দাফন হচ্ছিল না সেখানে তিনি ৫০০০ টাকা দিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।জেলার প্রতন্ত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলে সাউন্ড সিস্টেম প্রদান,বরিশালের বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় তিনি মোটা অংকের আর্থিক সহায়তা করেছেন।বরিশালের এক নিহত এক  সংবাদকর্মীর পরিবারকে প্রতিমাসেই আর্থিক সহায়তা প্রদান,বরিশালের কলেজ রো এলাকার ড্রাইভার লিটনের অবুঝ ৩ বছরের সন্তানের আবদুল্লাহর হৃদপিন্ডে ২টি ছিদ্র ধরা পড়ে।যা অতান্ত্য ব্যয়বহুল একটি চিকিৎসা ছিল।এ চিকিৎসায় এসপি আক্তার নিজের ব্যক্তিগত টাকা থেকে ১লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিশাল উদারতার পরিচয় দেন।এছাড়া তার অফিসে সহায়তার জন্য কেউ গয়ে খালি হাতে ফিরেছে এমন নজির নেই বললেই চলে।এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের কল্যানে তিনি রেখেছেন বিরল ভুমিকা, অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা করানো।জেলা পুলিশের শিল্পীগোষ্ঠী ও খেলোয়ারদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের আয়োজন এবং তাদেরকে বিভিন্ন পুরুষ্কার প্রদান করে উৎসাহ দেয়ার  মধ্যদিয়ে তিনি একজন যোগ্য এবং নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন বরিশালের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। আর এ কারণেই তার বিদায় লগ্নে জেলার পুলিশ বিভাগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন কর্মকান্ডের স্মৃতিচারণ করছে মানুষ অশ্রুসিক্ত নয়নে।গতকাল বরিশাল জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।ঐ অনুষ্ঠানে যাতে কেউ মন খারাপ করে না থাকে সেজন্য তিনি নিজেই গান গেয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়ে রেখেছেন।এ যেন এক প্রকৃত ভালো মানুষের পরিচয়ই রেখে গেলেন এসএম আক্তারুজ্জামান।