রেস্তোরাঁয় একটি স্থানে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়ায় পরোক্ষ ধূমপানের কবলে পড়ছেন অধূমপায়ীরা। তাই হোটেল ও রেস্তোরাঁয় স্মোকিং জোন রাখার বিধান বাতিল করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বরিশাল বিভাগের হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের সহযোগিতায় ও অ্যাডভ্যান্সমেন্ট অব হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট (আহার) বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা আরও জানান, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৮৫% পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি বরিশাল মহানগর কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বিদ্যমান আইনের একটি ধারায় কোন কোন রেস্তোরাঁতে ‘স্মোকিং জোন’ রাখার বিধান রাখা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে ‘স্মোকিং জোন’ থাকা সত্ত্বেও মানুষ রেস্তোরাঁতে গিয়ে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। এতে করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, স্বাস্থ্য ক্ষতিও হচ্ছে। তাই ‘স্মোকিং জোন’ আইন করে বন্ধ করা উচিত। আশার কথা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত প্রস্তাবনায় ‘স্মোকিং জোন’ রাখার বিধানটা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য বরিশাল মহানগর কমিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বর্তমান সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি ও সংশোধনী প্রস্তবনাকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি বরিশাল মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ নুর ইসলাম বলেন, আমার রেস্টুরেন্টটি ধুমপান মুক্ত। এরপরও আমি আজকের এই সভায় সভাপতি ও প্রধান অতিথির সম্মুখে সকল মালিকগণদের পক্ষ থেকে আশ্বাস প্রদান করছি, শতভাগ রেস্টুরেন্ট গড়ার ক্ষেত্রে আমরা পূর্ণ সমর্থন করবো এবং সুপারিশ জানাই সকল হোটেল-রেস্তোরাকে শতভাগ ধূমপানের আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস হোক।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য ও আল করিম রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী মোঃ রিয়াজ বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে রেস্তোরাঁকে পাবলিক প্লেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ‘ধুমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ এর বিধান রাখা হয়েছে। যা পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধুমপানমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আগৈলঝরা উপজেলার সদস্য মো: কামাল হোসেন বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকদের কেউ-ই চায়না রেস্তোরাঁর অভ্যন্তরে ধূমপান চলুক। ধূমপানের ফলে মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁতে আগত অতিথিরা সবাই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির শিকার হয়। তাই হোটেল-রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোন বন্ধে অচিরেই আইন করা হোক।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্মোকিং জোন বাতিলের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন খাবার বাড়ী রেস্টুরেন্টের মালিক মোঃ রায়সুল হোসেন, মা-বাবার দোয়া রেস্টুরেন্টের মোঃ রাসেল মিয়া এবং ডিজিটাল বাংলা রেস্টুরেন্টের আবরার মুসা প্রমূখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আমিনউল আহসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই রেস্তোরাঁসহ সকল পরিবেশ তামাক ও ধুমপানমুক্ত করতে হবে যা এসডিজির বাস্তবায়নের একটি অংশ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বরিশাল জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আপনারা আইন মেনে চলুন এবং সকল রেস্তোরায় ধুমপানমুক্ত সাইনেজ লাগানোর ব্যবস্থা করেন। আইন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানক রবেন। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় আপনাদের এই উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনকে ধন্যবাদ জানাই এ ধরনের আয়োজন করার জন্য।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ হয় রেস্তোরাঁতে। স্মোকিং জোনের মাধ্যমেও মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে।
ডাম প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ নাসির উদ্দিন আহম্মেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগের ৮০ জন হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক নেতৃবৃন্দ।