বরিশালের মুলাদীতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
আজ বুধবার ১৮ জুলাই বরিশাল জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মোঃ মহসিনুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় কামাল হাওলাদার ব্যাতীত ৩ আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন, মুলাদীর চর সাহেব রামপুর এলাকার আঃ জলিল সরদারের ছেলে আলমগীর সরদার, মোতাহার কাজীর ছেলে লিটন কাজী, আঃ মান্নান হাওলাদারের ছেলে কালাম হাওলাদার ও রফিজ উদ্দিন সরদারের ছেলে রিপন সরদার।
আদালতের বরাত দিয়ে বেঞ্চ-সহকারী হুমায়ুন কবির জানান, তিন সন্তান ও স্ত্রীর কথা গোপন রেখে ২০১০ সালের ২২ জুলাই আসামী আলমগীর সরদার চট্টগ্রামের মেয়ে ও গার্মেন্টস শ্রমিক শাহানাজকে বিবাহ করে।
বিবাহের পর ঢাকায় দুজনে একসাথে বসবাস করে। এর পরে তাদের মধ্যে মনমানিল্য চলতে থাকে। মনমানিল্যের কারণে শাহানাজ চট্টগ্রামে চলে যায়। পরে শাহাজানের ভাই জানতে পারে আলমগীর পূর্বের স্ত্রী ও সন্তানদের কথা গোপন রেখে শাহানাজকে বিবাহ করে।
বিবাহের বিষয়টি শুনে শাহানাজ ভেঙ্গে পরে। প্রতারণার অভিযোগে আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে বলে হুমকি দেয়। এছাড়া শাহানাজ মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সদস্য বদিউজ্জামান বাদলের বাসায় কাজ নেয়। এতে আসামীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়।
মামলার ভয়তে শাহনাজকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহানাজের সাথে সংসার করবে বলে অঙ্গীকার করে। এরপরে ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর মাদারীপরের আইনজীবী বদিউজ্জামানের বাসা থেকে আলমগীরের সাথে দেখা করার জন্য বের হয় শাহানাজ।
ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় চর সাহেবপুর লঞ্চঘাটে পৌছায়। এ সময় সাক্ষীরা তাদেরকে দেখতে পায়। এর পরে লিটনের ট্রলারযোগে হাওরাভাঙ্গা চরে নামে। চরে নেমে কালাম ও রিপন শাহানাজকে চেপে ধরে। আলমগীর শাহানাজের পেটে লাথি মারে, কানের লতি ফাটিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই শাহানাজের মৃত্যু হয়। পরে শাহানাজকে নদীতে ফেলে দেয়। পুলিশ নদী থেকে শাহানাজের লাশ উদ্ধার করে এবং ছবি সম্বলিত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সাক্ষীরা তাকে চিনতে পারে।
এ ঘটনায় মুলাদী থানার এসআই উত্তম কুমার দাশ বাদী হয়ে ২৮ অক্টোবর মামলা দায়ের করেন। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ডিবির এসআই নুরুল ইসলাম ৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করে। আজ বুধবার ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।