বরিশালে রেজা হত্যায় আদালতে মামলা,এসআই মহিউদ্দিনকে ক্লোজড

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তারের তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষানবীশ আইনজীবি মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত রেজাউল করিমের বাবা মো: ইউনুস মুন্সী। মামলায় বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর নাম উল্লেখ করে আরো দুইজনকে অজ্ঞাত করে আসামী করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মো: আনিছুর রহমান মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন (পিবিআই)রক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। একই সাথে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

এদিকে, বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন আহম্মেদকে ক্লোজড করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ খবর নিশ্চিত করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। তিনি জানান, প্রশাসনিক কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও তার বির”দ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত চলায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়।বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু জানান, বরিশাল আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে হত্যা করে।

এই ঘটনায় রেজাউল করিম রেজার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মামলা সুত্রে জানাগেছে, বরিশাল নগরীর রুপাতলী হামিদ খান সড়ক ২৪ নং ওয়ার্ডের মো: ইউনুস মুন্সীর বড় ছেলে রেজাউল করিম। সে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট মো: জাকির হোসেন মিন্টুর সাথে শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর হামিদ খান সড়কে সাদা পোষাকধারী এসআই মহিউদ্দিন ও তার সাথে থাকা আরো দুইজন রেজাকে ধরে নিয়ে একটি অন্ধকার কক্ষে পবেশ করে। তাকে কেন ধরা হয়েছে জানতে চাইলে এসআই মহিউদ্দিন জানায় রেজার সাথে মাল পাওয়া গেছে। এসময় পুলিশ সদস্যরা রেজাকে ঐকটি রোলার দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনার সময় রেজার বাবাকে এসআই মহিউদ্দিন আহম্মেদ তার ছেলেকে আরো দুইজনকে ধরিয়ে দিতে বলে। ত্রতে রেজা অস্বিকৃতি জানালে রেজাকে আটক করে নিয়ে যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর রেজা তার ছোট ভাইকে জানায় তাকে এসআই মহিউদ্দিন ও আরো দুইজন মিলে রোলার দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করেছে। তাকে কোপ শীতের কাপড় ও খাবার দেয়নাই। মামলা দায়েরের সময় উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাইয়ুম খান কায়ছার, সাবেক সভাপকি এবায়দুল্লাহ সাজু , সাবেক সাধ্রান সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ।

উল্লেখ গত শনিবার দিবাগত রাতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেজাউল করিম ওরফে রেজা (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশের নির্যাতনের কারণেই রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে রেজাউলকে আটক করেন নগর ডিবির এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ।

এদিকে রেজাউল করিম রেজার পুশিলী নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রোববার বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন মহানগর ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন আহমেদের বাসায় ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করেন। আজ রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের সাগরদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, পুলিশি নির্যাতন করে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার তাঁরা উপযুক্ত বিচার চান।