কোরবানির পশুর চামড়ার দর পতনের খবরে বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। লাভের আশায় পুঁজি খাটিয়ে এখন মূলধন হারানোর শঙ্কায় এখানকার ব্যবসায়ীরা।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, আকারভেদে ২০০-৪০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। ছাগলের চামড়া কিনেছেন ১০-২০ টাকায়। চামড়া সংগ্রহ করে তাতে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ২৫০ টাকার একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ আরও ২৫০ টাকা খরচ হয়।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, গত চার বছর ধরে দেশে চামড়ার দাম কম। এ বছর যা তলানিতে ঠেকেছে। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫-৪০ টাকা দর ঈদের আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ২৮-৩২ টাকা। এ ছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩-১৫ টাকা করা হয়। তবে এরই মধ্যে ঢাকায় দরপতনের খবর আসছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তার থেকেও অনেক কম দামে চামড়া কিনছেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। ফলে শেষ পর্যন্ত কী দাম পাওয়া যাবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বরিশালের ব্যবসায়ীরা।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান শাহিন জানান, গত কয়েক বছর ধরে চামড়া কিনে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়েছেন। তাই এবার মৌসুমী ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে। এবার বেশিরভাগ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে মাদরাসা ও এতিমখানার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, দুইদিনে ৩২০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছেন। চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। গড়ে ১১টি চামড়ার জন্য এক বস্তা লবণ লেগেছে। করোনার কারণে শ্রমিক সংকট থাকায় মজুরি বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা কাজের জন্য একজন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। এরপর ঢাকায় পাঠাতে ট্রাক ভাড়া পড়বে ২০-২২ হাজার টাকা।
‘ঢাকার আড়ৎদার ও ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। হঠাৎ আজ দুপুরে জানতে পারি চামড়ার দরপতন হয়েছে। ঢাকার লালবাগের পোস্তায় কয়েকজন আড়তদার ও ট্যানারি মালিক জানান পোস্তার আড়তদাররা শনিবার গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০-৬০০ টাকায় কিনেছেন। রোববার সেই চামড়া কিনছেন ১০০-৪০০ টাকায়।’
তিনি আরও জানান, হঠাৎ কী কারণে দরপতন ঘটেছে তা কেউ বলতে পারছে না। কেনা দামের চেয়ে যদি কম দামে বিক্রি করতে হয় তা হলে চামড়া অবিক্রীত থেকে যাবে। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে চামড়া বিক্রি না করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে আসবেন বলে জানান তিনি।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর দক্ষিণাঞ্চলের চামড়া বেচা-কেনার আন্যতম মোকাম হিসেবে পরিচিত। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর ঈদুল আজহার পর ঢাকার ট্যানারি মালিকরা এসে ট্রাক বোঝাই করে চামড়া নিয়ে যান। তবে এ বছর তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া এ বছর গরমের সময় ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার কারণে সংগ্রহ করা চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
টরকী বন্দরের চামড়া ব্যবসায়ী শওকত হাওলাদার বলেন, শুনেছি ঢাকায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির চামড়া। অথচ গতবারের চেয়েও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম এবার ২০-২৯ শতাংশ কমিয়ে ধরা হয়েছে।
দরপতন ঠেকাতে দাম নির্ধারণ ও রফতানির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে দাম নির্ধারণ ও রফতানির ঘোষণার পরও দামের বিপর্যয় কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখা দরকার। চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।