 
                                            
                                                                                            
                                        
বরিশালে সরকারি বরিশাল কলেজকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মানবেন্দ্র বটব্যালকে আহ্বায়ক, কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীককে যুগ্ম আহ্বায়ক, উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণকে সদস্য সচিব এবং মহাত্মা অশ্বিনী কুমার স্মৃতি সংসদের সভাপতি স্নেহাংশু বিশ্বাসকে সমন্বয়কারী করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত সোমবার বিকেলে নগরের কীর্তনখোলা মিলনায়তনে একটি মতবিনিময় সভায় বাস্তবায়ন কমিটি ঘটণের সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার বাস্তাবয়ন কমিটির পক্ষ থেকে কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
কমিটির উপদেষ্টা সদস্যরা হচ্ছেন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মো. হানিফ, ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল শাখার সভানেত্রী মিসেস রাবেয়া খাতুন, শিশু সংগঠক ও খেলাঘর বরিশালের সাবেক সভাপতি জীবন কৃষ্ণ দে, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।
১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উল্লেখেযোগ্য হচ্ছেন, প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এসএম ইকবাল, বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা, বরিশাল নাটক সভাপতি কাজল ঘোষ, উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলার সভাপতি নজরুল হক নীলু, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দুলাল মজুমদার, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাড. একে আজাদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সাধারণ সম্পাদক স্বপন খন্দকার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলার আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন, সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী, খেলাঘর বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজমুল হোসেন আকাশ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, সমকাল বরিশাল ব্যুরো প্রধান পুলক চ্যাটার্জী, বাংলাদেশ হেলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাংবাদিক তৌফিক মারুফ, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশান্ত ঘোষ, গণনাট্য সংস্থার আজিজুর রহমান খোকন, নদী-খাল-জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু, সুরঞ্জিত দত্ত লিটু, প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব গৌতম, চারুকলা বরিশালের অ্যাড. সুভাষ দাস নিতাই, বরিশালের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা।
কমিটি ঘোষণার পর সরকারি বরিশাল কলেজকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যালের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় সরকারি বরিশাল কলেজকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণ বাস্তবায়ন করার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে আগামীকাল (১৬ জুলাই) বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জেলার প্রশাসকের কাছে স্মরকলিপি দেওয়া হবে।
আগামী ১৯ জুলাই একই দাবিতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মরকলিপি দেওয়া হবে। পরবর্তী সময় সর্বস্তরের নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
মঙ্গলবারের সভা থেকে আহ্বায়ক মানবেন্দ্র বটব্যালসহ অন্যান্য বক্তারা বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের সঙ্গে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নাম যুক্ত করা সময়ের দাবি। মহাত্মা অশি^নী কুমারের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত এক সময়ে নৈশ কলেজ পরে দিবা-নৈশ কলেজ আজকের সরকারি বরিশাল কলেজে রূপ নিয়েছে। শুরুতেই এই কলেজের নাম মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নামে করার দাবি ছিল।
সেই দাবির সঙ্গে আওয়মী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠন একাত্ম ছিল এবং বর্তমানেও আছে। ইতিপূর্বে সেই দাবি বাস্তবায়ন না হলেও কেউ এর বিরুদ্ধে অবস্থান করেনি। পরবর্তী সময় দাবি জোরালো হতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই জাতীয় সংসদে অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণের প্রস্তাব করা হয়। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস ওই দাবি তোলেন।
বরিশালের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরামর্শে এবং বরিশালের সর্বস্তরের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতেই ওই দাবি তোলা হয়।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত। তিনি পিছিয়ে পড়া চন্দ্রদ্বীপ-বাকেরগঞ্জ-বাকলা ও বরিশালের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি শিক্ষা বিস্তারে দান করে গেছেন।
আজকের ব্রজমোহন কলেজ, ব্রজমোহন বিদ্যালয় এবং বাটাজোরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তী সময় অশ্বিনী কুমার দত্তের বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বরিশাল কলেজ। এই বাড়িকে কেন্দ্র করে প্রাদেশিক আন্দোলন হয়েছে। শিক্ষা সংস্কৃতি এবং মানুষের আকাঙ্খার ঠিকানা ছিল অশ্বিনী কুমার দত্তের এই বাড়ি।
তাঁর বাড়িটি যখন ভাঙা হয় তখনও বরিশালবাসী প্রতিবাদ করেছিল। তখন ওই আদলে একটি ভবন করার কথা থাকলেও সেটা আর করা হয়নি।
যিনি সমস্ত কিছু দিয়ে আমাদের শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষায় অবদান রেখে গেছেন। তার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত আজকের সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নাম যুক্ত হওয়া অত্যান্ত প্রাসঙ্গিক।
কমিটির আহ্বায় মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সরকারি বরিশাল কলেজের সঙ্গে মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নাম যুক্ত করার পক্ষেই সবাই ছিলেন এবং আছেন। চলমান এই কার্যক্রমের সঙ্গে সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি আগের মতো থেকেই দ্রুত বাস্তবায়নে সহযোাগিতা দেবে।##