প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে স্কুলের সামনে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাতে মারধরের শিকার স্কুলছাত্রী আবিরা ছরোয়ার শেফার মা মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে দুই যুবকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মতাসার এলাকার তাওসিফ মাহমুদ স্বাধীন (২২), আসাদ ইসলাম (২৩), নগরীর বগুড়া রোড দিলবাগ গলির ফাতেমা খাতুন চম্পা (৪৫) ও তার মেয়ে সাবিকুন নাহার শশি (১৭)।
আবিরা ছরোয়ার শেফা (১৬) আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ারের মেয়ে। চাকরির সুবাদে গোলাম ছরোয়ার আগৈলঝাড়ায় থাকেন।
তবে ছেলে মেয়ের পড়ালেখার কারণে তার পরিবার থাকেন নগরীর কাজীপাড়া লুৎফর রহমান সড়কের একটি ভাড়াবাসায়। শেফা নগরীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
স্কুলছাত্রীর মা মৌসুমী আক্তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, শেফা ও সাবিকুন নাহার শশি একই ক্লাসে পড়ালেখা করে। সেই সুবাদে তারা পরিচিত।
তারা একসঙ্গে কোচিং করতো। ওই কোচিং সেন্টার শশির বাসার কাছাকাছি। কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে প্রায়ই শশিকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে যেত শেফা।
কয়েক মাস আগে শশিকে ডাকতে তার বাসায় যায় শেফা। এসময় শশি ও আসাদ ইসলামকে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখতে পায় শেফা।
এ সময় শশি ও আসাদ কাউকে কিছু না বলার জন্য শেফাকে অনুরোধ করে। শেফা বিষয়টি গোপন রাখে। তবে শশি ও আসাদ বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে।
শশি ও আসাদ ফন্দি আটে শেফাকে ফাঁদে ফেলতে। তাহলে শেফা এ বিষয়ে আর মুখ খুলতে সাহস পাবে না। এতে শশির মা ফাতেমা খাতুন চম্পাও তাদেরকে সহায়তা করেন।
তাদের পরিকল্পনা ছিল আসাদ তার বন্ধু তাওসিফ মাহমুদ স্বাধীনকে দিয়ে শেফাকে প্রেমের প্রস্তাব দেবে। এরপর শেফার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তারা ধারণ করে রাখবে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, পরিকল্পনা মতো আসাদ তার বন্ধু স্বাধীনকে শেফার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর কিছুদিন পর স্বাধীন শেফাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তবে শেফা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর থেকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে শেফাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে স্বাধীন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে স্বাধীন তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে শেফার পথরোধ করে। স্বাধীন শেফাকে তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে। শেফার রাজি না হলে স্বাধীন টানা হেঁচড়া করে।
এক পর্যায়ে শেফাকে মারধর করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। শেফার চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিল স্বাধীন। এরপর ফের শেফাকে স্বাধীন উত্ত্যাক্ত করতে শুরু করে।
গত ৩০ নভেম্বর ক্লাসের পরীক্ষা দিতে শেফা স্কুলে যায়। পরীক্ষা শেষে শশি শেফাকে ডেকে স্কুলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন শশির মা ফাতেমা খাতুন, আসাদ ও স্বাধীন।
এসময় তাদের দেখে শেফা চলে যেতে চাইলে পথরোধ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা মারধর করেন। ওড়না ও জামা কাপড় ধরে টানা হেঁচড়া করেন।
শেফার মা মৌসুমী আক্তার বলেন, শেফার বাবাকে এসব ঘটনা জানানো হলে তিনি আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেন। পাশাপাশি শেফার স্কুলের এক শিক্ষককে বিষয়টি জানান। তবে এরপর থেকে স্বাধীন, আসাদ, ফাতেমা খাতুন ও তার মেয়ে শশি ভিন্ন কৌশলে শেফাকে হয়রানি শুরু করে।
স্কুল ও কোচিং সেন্টারে শেফার নামে তারা কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন কথা এবং নানা ধরনের কুৎসা রটাচ্ছে। সম্প্রতি হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে। লজ্জায় শেফা বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কোচিং সেন্টারে যেতে পারছে না।
শেফা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। শেফাকে সুস্থ করতে মানসিক চিকৎসক দেখানো হয়েছে। তবে এখনো সে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
শেফার বাবা আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার জানান, প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ভেবেছিলাম স্কুল শিক্ষককে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানোর কারণে স্বাধীন, আসাদ, ফাতেমা খাতুন ও তার মেয়ে শশি আমার মেয়ে শেফাকে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকবে। তাছাড়া বিষয়টি জানাজানি হলে লোকে নানা কথা বলবে। কিন্তু অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।