বরিশালে পালিয়ে বিয়ের ৬ মাসের মাথায় স্ত্রীকে ছাদ থেকে ফেলে দিলো যৌতুকের দাবীতে!

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বরিশালে পালিয়ে বিয়ের সাত মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে এক কিশোরীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নগরীর রুপাতলী হাউজিং এলাকার ২২ নম্বর সড়কের সারা-জারা ভবনের সামনে থেকে আহত কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

১৪ বছরের জান্নাতুল ফেরদৌসি নগরীর রুপাতলী শেরেবাংলা সড়কের দিনমজুর রিপন হাওলাদারের কন্যা।

কিশোরীর মা নুপুর বেগম জানান, তার মেয়ে স্থানীয় এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সাত মাস আগে সে রুপাতলী ভাসানী সড়কের বাসিন্দা অটোচালক রাকিব হোসেনের সঙ্গে পালিয়ে যায়।

মেয়ে নিখোঁজের পর তারা থানায় জিডিও করেন। পরে ছেলের বাবা তাদের দুজনের বিয়ে হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে মীমাংসা করেন। এরপর থেকে মেয়ে ভাসানী সড়কের স্বামীর বাসায় থাকত।

“দুই মাস পূর্বে মেয়েকে বাসায় দিয়ে যায় জামাই রাকিব। তখন বলে দুই লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়ে মেয়েকে পাঠিয়ে দেবেন। আমাদের সামর্থ্য না থাকায় মেয়েকে না পাঠানোর সিদ্বান্ত নেই।

“কিন্তু কয়েকদিন পূর্বে সে আবারও জামাইর সঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপর আর খোঁজ নেইনি।”

যৌতুক না পেয়ে বরিশালে কিশোরীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
নুপুর বেগম বলেন, রাত ১০টার দিকে এক লোক তাকে হাসপাতালে আসতে বলে। তারা আসার পর মেয়ে শুধু এটুকুই বলেছে, তার স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। আর কিছু তিনি জানেন না।

একই কথা জানিয়ে রিপন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যৌতুকের দাবিতে জামাই, শ্বাশুড়ী ও ননদ খুব মারধর করতো। কিভাবে ও কয় তলা থেকে ফেলেছে, সেই কথা মেয়ে কিছুই বলতে পারে নাই।”

ঘটনাস্থল রুপাতলী হাউজিংয়ের ২২ নম্বর সড়কের পাঁচ তলা বিশিষ্ট সারা-জারা ভবনে গিয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

কিশোরী বধূকে উদ্ধার করা ওই ভবনের প্রতিবেশি মো. নিজাম বলেন, “উপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ ও নারীর চিৎকার শুনে দেখি ভবনের সামনে রাস্তার উপর কিছু পড়ে আছে। কাছে গিয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে ট্রিপল নাইনে কল করে অ্যাম্বুলেন্স এনে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।”

সারা-জারা ভবনের মালিক স্বপন সরদারের ছেলে মেহেদি বলেন, “কিভাবে মেয়েটি এখানে আসলো বা কয় তলা থেকে ফেলা হয়েছে তা কিছুই বলতে পারি না।”

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় মেয়েটির দুই পা ভেঙ্গে হাড় বের হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও মাথায় আঘাত পেয়েছে।”

তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানান চিকিৎসক।

মহিলা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডের সেবিকা তমালিকা হালদার বলেন, “অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে নিয়ে আসা হয়। এখানের আনার পর জ্ঞান ফিরেছিলো। তখন সে জানিয়েছে, স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এর বেশি সে কিছু বলতে পারেনি।”

কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, “মেয়েটি সুস্থ না হলে কি ঘটনা ঘটেছিলো বলতে পারব না। পরিবারের পক্ষ থেকেও পরিস্কার কিছু জানাতে পারছে না।

“তবে মেয়েটিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো, এখন পর্যন্ত সেটাই ধারণা করছি।”