আসন্ন রমজানের ঈদকে সামনে রেখে বরিশালে হঠাৎ করেই বেড়েছে মাদক কারবারীদের দৌড়াত্ম্য। পুরুষের পাশাপাশি আশংকাজনক হারে বাড়ছে নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। তবে থেমে নেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের অভিযানে একাধিক মাদক কারবারী আটকের পাশাপাশি উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য। চলতি মাসে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে প্রায় ২৬ কেজি গাঁজা ও ১৭শ ৭১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ২ নারীসহ আটক করা হয় ৩৫জন মাদক ব্যবসায়ীকে।
তবুও থেমে নেই মাদক কারবারীরা। এদিকে পুলিশ বলছে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে মাদকের ভয়াবহতায় উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, গত ২৭ মার্চ নগরীর ৯ নং ওয়ার্ড থেকে ৮ কেজি গাঁজাসহ মাদক দম্পত্তি রাজু ও হালিমা বেগমকে আটক করে পুলিশ। একতলা লঞ্চ ঘাটে প্রবেশের মূখে টিকিট কাউন্টারের সামনে পাকা রাস্তার উপর অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তাদের সহযোগি শামীম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
একই দিন এয়ারপোর্ট থানাধীন সেনাপল্লী এলাকা থেকে ১১০ গ্রাম গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী মিজান খলিফা (২০), রাজিব গাজী (২৪), সোহরাব হাওলাদার (৪৫) ও হেলাল খান (৪৫) কে আটক করা হয়। ২৫ মার্চ ৯নং ওয়ার্ড লঞ্চঘাট এলাকায় থেকে মোঃ রিফাত হোসেন (১৯) ও রুহুল আমীন বেপারী (২০) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে পুলিশ।
২৪ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে নগরীর কাউনিয়া থানাধীন চরবাড়িয়া এলাকা থেকে ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৬০০ গ্রাম গাঁজাসহ মোঃ সাইফুল ইসলাম সবুজ (৩৭) ও মোঃ কাওসার মিয়া (২০) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়।
একই দিন কোতয়ালী থানা পুলিশের অভিযানে ৬ কেজি গাঁজাসহ আবুল কালাম আজাদ(৩৯), মোঃ মিজানুর (২২) ও দেলোয়ার আকন হাওলাদার (৪০) নামে তিন মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়।
২৩ মার্চ নগরীর ২০নং ওয়ার্ড হাজী জালাল উদ্দিন লেন এলাকা থেকে মোঃ মনির হোসেন হাওলাদার (৩২) ও মোঃ গোলাম কিবরিয়া (৩৮) কে ৫০ পিস ইয়াবা সহ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। একই দিন ১৯নং ওয়ার্ডের নাজিরেরপুর এলাকা শুভ দত্ত (২৭) ও মোঃ সাব্বির আকন (২৬) কে ১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
২২ মার্চ বন্দর থানাধীন চাঁদপুরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড হিজলতলা এলাকা থেকে ১৮০ পিস ইয়াবাসহ চট্টগ্রামের ইয়াবা ডিলার মোঃ মুরাদ হাসান চৌধুরীকে আটক করে বন্দর থানা পুলিশ।
একই দিন গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯নং ওয়ার্ড রসুলপুর এলাকা থেকে দেড় কেজি গাঁজাসহ মাদক দম্পতি মুন্না ফরাজী (২২) ও খাদিজা আক্তার যুথি (২১) কে আটক করা হয়। ১৯ মার্চ নগরীর রুপাতলী হাউজিং থেকে সাড়ে তিন কেজি গাঁজা ও ৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মোঃ মিলন মোল্লা (৩৭) ও মোঃ মহিবুল ইসলাম পাভেল (৩৬) কে আটক করে পুলিশ।
১৭ মার্চ নগরীর ভাটিখানা কাজীবাড়ি এলাকা থেকে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সজল ওরফে সাজন গাজী (৩০) ও আঃ জলিল খান (৩২) কে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
একই দিন নগরীর চরআবদানী এলাকা থেকে ১১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মোঃ রাজিব শরীফ (২৬) ও মোঃ ইমরান খান পিন্টু (২৫) কে আটক করা হয়। ওই দিনই ভাটিখানা এলাকা থেকে ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মোঃ রেদোয়ান আহম্মেদ আকন (২৬) ও জাফর সাদিক মাকিন মিয়া (৩২) কে আটক করা হয়। একই দিন কোতয়ালী থানা পুলিশের অভিযানে নগরীর হাতেম আলী কলেজ ও ক্যাডেট কলেজ এলাকা থেকে মোঃ শাকিল (২১), নাঈম হাওলাদার(২০) ও মোঃ বিল্লাল সরদার(৩০) কে আটক করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। অপর এক অভিযানে নগরীর একতলা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে ৬ কেজি গাঁজাসহ কুমিল্লা বাসিন্দা মাদক ব্যবসায়ী মোঃ আনিছুর রহমান রকি (২০) কে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিনই নগরীর মগরপাড়া এলাকা থেকে ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মোঃ আল আমিন খান (৩১) কে আটক করে পুলিশ।
১৬ মার্চ ১০নং ওয়ার্ড এলাকা থেকে ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কক্সবাজারের মাদক ব্যবসায়ী রেহেনা আক্তার (৩৮) কে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
৪ মার্চ এয়ারপোর্ট থানাধীন রামপট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ৬০০ পিস ইয়াবাসহ ভোলার মাদক ব্যবসায়ী পারভীন আক্তার (২৬) কে আটক করা হয়।
তথ্যমতে, আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ অন্যান্য জেলা থেকে এসে বরিশালে মাদক সাপ্লাই দিচ্ছে।
আর তাদের সহযোগিতা করছে বরিশালের মাদক কারবারীরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাদক জব্দ হওয়ায় কৌশল পাল্টে নারীদের এ ব্যবসায় যুক্ত করছে কারবারীরা।
এছাড়া আটককৃতদের অধিকাংশই যুবক। যদিও যুবক-যুবতীদের মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং পাড়া মহল্লায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে বেশ জোরেশোরে চলছে সভা সেমিনার।
এদিকে হঠাৎ করেই মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। স্কুল শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, কিছুদিন বরিশালে মাদক কিছুটা নির্মূলের পথে যাচ্ছিল। তবে চলতি মাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে একাধিক স্থান থেকে মাদক উদ্ধার হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আজিমুল করিম বলেন, সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতায় সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।
এজন্য থানার প্রত্যেকটি বিট এলাকায় স্থানীয় যুব সমাজ, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কোন ছাড় নেই।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, “যার যার সন্তান, তাদেরকেই সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। আপনার সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মিশে এগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের।
তিনি বলেন, মাননীয় পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অভিযান চলছে এবং অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ নিরোধে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ পাড়া মহল্লায় পুলিশ অফিসারগণ নিয়মিত সভা করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে।