বরিশালে চলছে দিপালী উৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

দিপালী উৎসবকে ঘিরে বরিশালের মহাশ্মশানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সর্ববৃহৎ ও দেড়শ বছরের পুরনো এ মহাশ্মশানে প্রতিবারের মতো এবারও সমাধিগুলো ধোয়া-মোছার কাজ শেষ হয়েছে।

 

আগামী শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ৪টা ৩২ মিনিটে ভূত চতুর্দশী আরম্ভ হবে ও শনিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ২টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত এ তিথি থাকবে। সে সময়ে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে এখানে।

 

 

এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রী শ্রী শ্মশান কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে। প্রতিবছরই এ বৃহৎ শ্মশানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন হয়ে থাকে।

 

বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুণ্ডু জানান, প্রতিবছর ভূত চতুর্দশী পূণ্য তিথিতে দিপালী উৎসব হয়ে থাকে। প্রিয়জনের সমাধিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়ার সেই প্রথা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে হয়ে আসছে।

 

 

তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মহাশ্মশানে ৬০ হাজারের মতো সমাধি স্থাপন করা রয়েছে। এতে শ্রদ্ধা জানাতে নেপাল ও ভারতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে পাঁচ একর ৯৬ শতাংশের এ শ্মশানে। তবে করোনার কারণে এবারের চিত্র একটু ভিন্ন হতে পারে। এখানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি রয়েছে।

 

 

মানিক মুখার্জী কুণ্ডু জানান, দিপালী উৎসবকে ঘিরে এরইমধ্যে স্বজনবিহীন প্রায় ৯০০ সমাধি মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে রং করা হয়েছে। সমিতির বাইরে স্বজনরা নতুন করে সমাধি সংস্কার ও ধোয়া-মোছার কাজ করেছেন। এছাড়া মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে মহাশ্মশানে করা হয়েছে বাহারি আলোকসজ্জা।

 

 

তিনি আরও জানান, মহামারি করোনার কারণে এবার শ্মশানে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে নো মাস্ক, নো এন্ট্রি অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া কাউকে শ্মশানের ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এবার প্রথম গেট দিয়ে সবাইকে জীবাণুনাশক স্প্রের মধ্য দিয়ে শ্মশানে প্রবেশ করতে হবে। এক কথায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্মশান দিপালীর আয়োজন করা হয়েছে।

 

 

এ উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবারের মতো জোরদার অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও র‌্যাব। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুরো শ্মশানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে।

 

 

এছাড়া শ্মশান এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। নগরের লাকুটিয়া খাল ঘিরে প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ মহাশ্মশান।

 

 

প্রায় পৌনে ২০০ বছর সময় ধরে চলে আসা এ রেওয়াজ অনুযায়ী প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশে দিপালী উৎসবে জ্বালানো হয় প্রদীপ। প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে আয়োজন করা হয় এ উৎসবের। শুধুমাত্র বরিশালের নয়, শ্মশানে দিপালী উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে আসেন ভক্ত-অনুসারী ও পর্যটকরা।

 

 

প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোমের আলো জ্বালানো ছাড়াও সমাধিতে তার প্রিয় খাদ্যসহ বিভিন্ন উপাচার ও ফুল দিয়ে সমাধি সাজিয়ে তোলা হয়। পূর্ব-পুরুষের স্মৃতিতে করা হয় প্রার্থনা।

 

তবে যাদের স্বজনরা দিপালী উৎসবে এখানে আসে না, সেসব সমাধিগুলোতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয় উৎসবের দিন।