দিপালী উৎসবকে ঘিরে বরিশালের মহাশ্মশানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে শ্মশান ও শ্মশানের সমাধিস্থাপনাগুলো ধোয়া মোছার কাজ শেষে চলছে রং ও লেখার কাজ। যা স্বজনদের পাশাপাশি পুরনো সমাধিগুলো নিজ উদ্যোগে সংস্কারের কাজ করছে মহাশ্মশান রক্ষা সমিতি।
জানা গেছে, সোমবার (৫ নভেম্বর) রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে ভূত চতুর্দ্দশী আরম্ভ হবে ও (৬ নভেম্বর) মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই তিথি থাকবে। সে সময়ে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে এখানে। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রী শ্রী শ্মশান কালী পূজা অনুষ্ঠিত হবে মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে। প্রতিবছরই এই বৃহৎ শ্মশানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্যদিয়ে এই উৎসব উদযাপন হয়ে থাকে। বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার মতবাদ অনলাইনকে জানান, প্রতিবছর ভূত চতুর্দশী পূণ্য তিথিতে দিপালী উৎসব হয়ে থাকে। প্রিয়জনের সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে দেওয়ার সেই প্রথা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে হয়ে আসছে।
তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী এই মহাশ্মশানে প্রায় লক্ষাধিক সমাধি স্থাপন করা রয়েছে। এতে শ্রদ্ধা জানাতে নেপাল এবং ভারতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এই শ্মশানে। এখানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি রয়েছে। তিনি মতবাদ অনলা্ইনকে আরও জানান, দিপালী উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে স্বজনবিহীন ৮৫০ সমাধি মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে রঙ করা হয়েছে। সমিতির বাইরে স্বজনরা নতুন করে সমাধি সংস্কার এবং ধোয়া মোছার কাজ করছেন। এছাড়া মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে মহাশ্মশানে করা হবে বাহারি আলোকসজ্জা। যার কাজও এখন শেষের দিকে।
এ উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবারের মতো জোরদার অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও র্যাব। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুরো শ্মশানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। এছাড়া শ্মশান এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। নগরের লাকুটিয়া খাল ঘিরে প্রায় চার একর জায়গায় জুড়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ মহাশ্মশান। প্রায় পৌনে দুইশো বছর সময় ধরে চলে আসা এই রেওয়াজ অনুযায়ী প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিপালী উৎসবে জ্বালানো হয় প্রদীপ। প্রতিবছর ভূত চর্তুদশীর পূণ্য তিথিতে আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। শুধুমাত্র বরিশালের নয়, শশ্মানে দিপালী উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে আসেন ভক্ত অনুসারী ও পর্যটকরা। প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোমের আলো জ্বালানো ছাড়াও সমাধিতে তার প্রিয় খাদ্যসহ বিভিন্ন উপাচার ও ফুল দিয়ে সমাধি সাজিয়ে তোলা হয়। পূর্ব-পুরুষের স্মৃতিতে করা হয় প্রার্থনা। তবে যাদের স্বজনরা দিপালী উৎসবে এখানে আসে না। সেসব সমাধিগুলোতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে দীপ প্রজ্জ্বলন করা হয় উৎসবের দিন।