এম.এম.আই লিমনঃ দুই দপ্তরের কোন্দলে কোটি টাকার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট জ্বলে যাবার উপক্রম ঘটেছে।ত্রিমাত্রিক সমেস্যায় পরেছে কোটি টাকার নগরীর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।এরমধ্যে রয়েছে, তিন কোটি বিশ লক্ষ লিটার পানি উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষমাত্রা থাকলেও সরবরাহ হচ্ছে এক কোটি ৪০ লক্ষ লিটার,দূর্বল মেশিনারিজের কারনে সাপ্লাই তে কালখেপন,দুটির প্লান্টের একটিতে জেনারেটর নেই অপরটিও অকেজো।
এ ব্যাপারে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃমাইনুল হাসান বলেন,রুপাতলী এলাকায় ১৬ এম এল ডি পানি শোধন ক্ষমতা সম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট,বিভিন্ন ব্যাসের ডি আই ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন,বিভিন্ন ব্যাসের পিভিসি ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন,বিভিন্ন ব্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ লাইন,উৎপাদক নলকূপ,পাম্প হাউজ ইত্যাদি অবকাঠামোগুলোর নির্মাণকাজ প্রকল্পের মেয়াদ কালের ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সমাপ্ত হয়।কিন্তু সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে তা পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি।
নির্মান কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরে জেনারেটরের মাধ্যমে প্ল্যান্টটি পরিক্ষা মূলক ভাবে চালু করা হয়।পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ওজোপাডিকো লিঃ কতৃক ট্রিটমেন্ট প্লান্টটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি গ্রাহক পর্যায়ে পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ছয় মাস সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে এবং ছয় মাস অতিক্রান্ত হবার পরে বিসিসি সার্বিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বহন করবে এমন চুক্তি হয়।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়,স্থানীয় সরকার বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন -১ শাখার৪৬.০৭০.০৩০.০০.০০.২১২.২০১২-১৫৬৮ নং স্মারক মোতাবেক ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কতৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সিলেট ও বরিশাল মহানগরীতে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ ‘প্রকল্পের আওতায় বরিশাল মহানগরীর বেলতলা ও রুপাতলী এলাকায় নির্মিত ১৬ এমএলডি শোধণ ক্ষমতা সম্পন্ন ০২ টি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সুষ্ঠু ভাবে হস্তান্তরের নিমিত্তে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (MoU)স্বাক্ষরের জন্য মন্ত্রণালয় কতৃক নির্দেশনা মোতাবেক রুপাতলী ও বেলতলা এলসকায় ১৬ এমএলডি পানি শোধন ক্ষমতা সম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ২ টির পানি শোধনাগারের সকল সরঞ্জাম সচল অবস্থায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিসিসিকে বুঝিয়ে দিবে,হস্তান্তরের পর হতে ৬ মাস পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পানি শোধনাগার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে।
বিসিসি এ বিষয়ে সার্বিক সহয়তা প্রদান করবে।হস্তান্তরের পর হতে ৬ মাসের মধ্যে বিসিসি’র বিদ্যমান জনবল পানি শোধনাগার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি শিখে নেবে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে। হস্তান্তরের পর হতে ৬ মাস পর্যন্ত পানি শোধনাগারে কোন ত্রুটি দেখা দিলে তা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সমাধান করবে এবং ওভারহেড ট্যাংক পর্যন্ত পানি সঞ্চালন লাইনে কোন ত্রুটি দেখা দিলে তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত করবে,প্রয়োজনে মালামাল পরিবর্তন করে দ্রুত সমস্যা সমাধান করবে,উল্লেখ থাকে,কোন ক্রুটির কারনে পানি শোধনাগার বন্ধ থাকলে বন্ধ থাকাকালীন সময়কাল নির্ধারিত ৬ মাসের সাথে যোগ হয়ে কার্যকাল গননা করা হবে।
ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি এক বছর চালু রাখার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিসিসিকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।এছাড়াও পানি শোধনাগারের ভবিষ্যৎ উন্নয়নেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। ভবিষ্যতে কোন কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে সেক্ষেত্রেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।হস্তান্তরের পর ৬মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বিসিসি সার্বিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বহন সহ জনগণকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করবে।এ ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
বিসিসি সকল অবকাঠামো নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে তাদের জনবল নিয়োজিত করবে।ডিজাইন মোতাবেক জমিরবলে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী সকল অবকাঠামো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিসিসিকে বুঝিয়ে দিবে। পানি শোধনাগারের As Built Drawing সহ যাবতীয় ডকুমেন্ট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিসিসিকে বুঝিয়ে দিবে। হস্তান্তরকৃত সম্পদের পৃথক বিবরণসহ রেজিস্ট্রার উভয় পক্ষের নিকট সংরক্ষিত থাকবে। পানি শোধনাগার দুটির মধ্যে বেলতলার প্লান্টটির নদী ভাঙনের ফলে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে নদী ভাঙন অব্যহত থাকলে এর ফলে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তা বিসিসি’র উপর বর্তাবে না। এবং সবশেষ নদী ভাঙনের ফলে সৃষ্ট উল্লিখিত পরিস্থিতির সাক্ষরিত ছবি, ভিডিও পৃথক বিবণ সহ উভয় পক্ষের নিকট সংরক্ষিত থাকবে এমন শর্তবলীর চুক্তিপত্রে ২০১৮ সালের ৭ আগষ্ট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ও রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের হস্তান্তর করনের চুক্তিপত্রের ৩০০ টাকার স্টাম্পে ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল সাক্ষর করে।
এতে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করে বরিশাল সদর -বাকেরগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ও বিসিসি’র পানি সরবরাহ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলে জানান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি আরো জানায় ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বিসিসি’র মেয়রের অনুরোধে আরো তিন মাস সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটি।
এর মধ্যে সম্প্রতি রুপাতলী’র প্লান্টটির চারটি মটরে ক্রটি দেখা দিয়েছে এমন বিষয় অবহিত করে বিসিসি কতৃক চিঠি প্রদান করা হলে তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।বেলতলা এবং রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ডিজাইন ধারন ক্ষমতা এবং ব্যায় এক। রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কাজ বাস্তবায়ন কারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুলতান, মিলন, জেবি এন্টারপ্রাইজ যৌথ ভাবে। এবং বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ করে মেঘনা ট্রেডার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নদীর স্রোত বিবেচনা পূর্বক বিআইডব্লিউটিএর ছাড় পত্র ছাড়াই নদীর কিনারে শত কোটি টাকা ব্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করার বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সে সময়ে দায়িত্বে ছিলেন না বলে বলতে পারছেন না বলেও জানায়। প্লান্ট দু’টি ২৪ ঘন্টা চালু থাকলে এক কোটি ৬০ লাখ করে মোট তিন কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব বলেও জানায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে,বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাঁচ লাখ নগরবাসীদের চাহিদানুযায়ী ৪ কোটি ৫০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রয়োজন। কিন্তু বিসিসি উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি। তবে ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্তমানে সরবরাহ করতে হচ্ছে ১ কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি।