করোনার রিপোর্ট জালিয়াতি নিয়ে তোলপাড় চলছে গোট দেশ জুড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে করোনাকে কেন্দ্র ঘটেছে আরেক কান্ড আর তা হলো করোয় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ব্যক্তির কফিনে মাদকের চালান পাচার।
এমনই ঘটনা ঘটেছে বরিশাল নগরীতে। গভীর রাতে করোনা উপসর্গে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির জন্য আনা কফিনে পাওয়া গেছে ২১ পুরিয়া গাঁজা। রোববার ভোর রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে ঘটেছে এই ঘটনা। তবে মাদকের চালান পাচারের আগেই এ্যাম্বুলেন্স চালকের সহযোগিতায় তা চলে গেছে পুলিশের হাতে। অবশ্য এই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই খুঁজে পায়নি পুলিশ।
সন্দেহ করা হচ্ছে করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত দারোয়ান কিংবা মৃত ব্যক্তির ছেলে জড়িত রয়েছে মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে। বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড সূত্রে জানাগেছে, ‘গত শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় আব্দুল হালিম নামের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধকে।
তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের নলী তুলাতলা গ্রামের মৃত কদম আলী’র ছেলে। এরপর রোববার রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘নিয়ম অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের দেহ হাসপাতাল থেকে নিতে হলে কফিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সে কারণেই ওই ব্যক্তির মৃতদেহ দাফনের জন্য একটি কাঠের তৈরি কফিন আনা হয় বাহির থেকে।
মৃতদেহ বহন করা শেবাচিম এলাকার বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক লিটন জানান, ‘কফিনে মৃতদেহ প্রবেশ করার ঠিক আগ মুহূর্তে কফিনের ভেতরে কাগজে মোড়ানো কিছু বস্তু চোখে পড়ে। তখন মৃত ব্যক্তির ছেলে সোহাগ মিয়া ওগুলো ময়লা আবর্জনা বলে ছুড়ে ফেলে।
কিন্তু সে-ই আবার ওই কাগজে মোড়ানো ওই বস্তু কফিনে ভরে মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তোলে।
চালক লিটন আরও জানান, ‘সোহাগের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়।
এ কারণে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় কল সেন্টার ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি অবগত করেন।
মুহূর্তের মধ্যে এসআই মিজান এর নেতৃত্বে কোতয়ালী মডেল থানার দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাগজে মোড়ানো প্যাকেট থেকে ২১ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। পাশাপাশি রাতে সোহাগসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
তথ্য নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) বলেন, ‘কফিন কোথা থেকে এবং কে এনেছে সে বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। তাছাড়া কফিনের ভেতরে কে গাঁজা রেখেছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তাই বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে। খুব শীঘ্রই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানিয়েছে,রাতে হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ।
কিন্তু তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তার অবর্তমানে নিরাপত্তা প্রহরী মমিনুল এবং খায়ের দায়িত্বে ছিলেন করোনা ওয়ার্ডে।
তাদের মধ্যে খায়ের মৃতদেহ বহনের জন্য কফিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
যদিও খায়েরের দাবি ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদের দেখানো মতেই তিনি ওই কফিন সংগ্রহ করে দিয়েছেন।
তার পরেও করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তির কফিনের মধ্যে গাঁজা পাওয়ার বিষয়টিতে সন্দেহের তীর নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী এবং মৃতব্যক্তির ছেলের দিকেই ছুটছে।