এলএলবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় বরিশাল বিএম কলেজ কেন্দ্রে গতকাল একটি কক্ষে নকলের যেন হাট বসেছিল। ওই কেন্দ্রের সিক বেডে (২০৪ নং কক্ষ) ৬০ জন শিক্ষার্থী প্রভাব খাটিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে এর বিনিময়ে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন নকল প্রক্রিয়ার সাথে কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত।
এ পরিস্থিতিতে বিএম কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলএলবি প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় বিএম কলেজ কেন্দ্রের আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে জানান, তিনি পরীক্ষা কমিটি থেকে অব্যাহতি নিবেন। বিএম কলেজ কেন্দ্রে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এলএলবি ১ম বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতেই ওই কেন্দ্রের সিক বেডে (২০৪ নং কক্ষ) হৈচৈ পড়ে যায়। সেখানে সিট ৩৬টি হলেও ৬০জন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এদের মধ্যে প্রত্যেকেই রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা প্রভাবশালীদের তদবিরে টাকা দিয়ে সিক বেডে পরীক্ষা দিয়েছেন। ওই কক্ষের একাধিক পরীক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের, রেজভি, প্রসেনিজৎ দাস অপু, জসিম উদ্দিন, তাজুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, মাইনুল হোসেন, ওয়ালিউল ইসলাম বই দেখে দেখে পরীক্ষা দিয়েছেন।
এমন অবস্থা দেখে সেখানকার ২ পরিদর্শকের মধ্যে একজন প্রভাষক মোজাম্মেল হোসেন পরীক্ষার দায়িত্ব পালন না করে চলে যান। এর আগে গত শুক্রবার একই পরীক্ষায় শেরে বাংলা কলেজের একজন শিক্ষক নাজেহাল হয়ে পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করে চলে যান। পরীক্ষা চলাকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম এসে একটি কক্ষে ৬০ জন পরীক্ষার্থী দেখে কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুককে ফোন করলে তিনি ওই টিমের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে আহ্বায়ক ওমর ফারুক বলেন, আমি তাদের বলছি বহিষ্কার করেন। এরকম করলে তো হবে না। কিন্তু কেউ বহিষ্কার করার সাহস পাননি। প্রয়োজনে কেন্দ্র বাতিল করা যেতে পারে। আমরা চাই না বিএম কলেজে ল’ বিষয়ের পরীক্ষা হোক। একাধিক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, সিক বেডে ১ হাজার টাকার বিনিময় তাদের সুযোগ করে দিয়েছেন বিএম কলেজের শিক্ষক নেতা বিকাশ কুসুম, রফিকুল ইসলাম, রহিম সরদারসহ কয়েকজন। কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরোয়ার বলেন, ল’ বিষয়ের পরীক্ষা আমাদের কাছে একটি ‘জাতীয় বিপদ’। তারা চাননি, জোর করে কেন্দ্র দেয়া হয়েছে। যারা সিক বেডে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারা যে কেবল কোন একটি দলের শুধু তাই নন, তাদের মধ্যে প্রশাসনের লোকজনও রয়েছেন। তবে তার পরিষদের কোন শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা উচিত।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, আমরা জেলা প্রশাসক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছি যেন ল’ বিষয়ের পরীক্ষার কেন্দ্র না দেয়া হয়। এরপরও তারা জোর করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার যেভাবে পরীক্ষা হয়েছে, সেভাবে পরীক্ষা দেয়া যায় না। আমরাও উদ্বিগ্ন। পরীক্ষায় জেলা প্রশাসনের টিম ছিল না। পুলিশ সদস্য ছিলেন ২ জন। আমরা কিভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবো। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পরীক্ষার এ অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। এমনটা হলে তারা আগামীতে পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরা সিক বেডের নামে বেপরোয়া কর্মকা- করেছেন। তিনি বলেন, আহ্বায়ক অব্যাহতি চাইলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।