বরিশালে ইংরেজী ভাষার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষা

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

এইচ আর হীরা ॥ পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি।উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও বরিশাল নগরীর বিভিন্নস্থানে ঝুলছে ইংরেজি লেখা সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড।আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

 

 

৫২,র ভাষা আন্দোলন হয়েছিল বাংলা ভাষার জন্য, মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র প্রতি বছর দিবসটি রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার এ স্বীকৃতি অর্জিত হলেও প্রতি বছর এ দিনটিতেই কেবল মাতৃভাষার ব্যবহার হয়ে থাকে। বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়েনা।বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ পাশ হয়।তবে আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তা মানছেনা কেউ।

 

 

বিশেষ করে স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের নির্দেশনা মানছেনা।ফলে বরিশাল নগরীসহ গোটা দেশেই চোখ ধাধানো ইংরেজী সাইনবোর্ড দেখা যায়।জানা যায়,দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষের (বাবাকো) নির্দেশমালায় সব ধরণের প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও ব্যানার বাংলায় লেখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

 

 

 

হাইকোর্ট আদেশের সাত বছর অতিবাহিত হলেও বরিশালের রাজপথ, বিপণি বিতান, সরকারী-বেসরকারী অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।এমনকি বাংলা শব্দকে ইংরেজি হরফে তুলে ধরার অসংখ্য নজিরও রয়েছে। এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। এসব সাইনবোর্ড ব্যবহার বন্ধে আইন থাকলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো পদক্ষেপ।বরিশাল নগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সাইনবোর্ডে ইংরেজি বর্ণে, ইংরেজি বর্ণের বাংলা রূপে, অথবা বাংলা ও ইংরেজি মিশ্র ভাষায় লেখা রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সর্বত্রই বাংলার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলার নজির রয়েছে।

 

 

 

সরেজমিনে দেখা গেছে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিক, সরকারী অফিস, বেসরকারী অফিস, কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকে ইংরেজী লেখা রয়েছে।যদিও কয়েক বছর পূর্বে নগরীতে ইংরেজী সাইনবোর্ড অপসারণে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। তখন অনেকের মধ্যেই সচেতনতা তৈরী হয়েছিল এবং অনেকেই ইংরেজী সাইনবোর্ড অপসারণ করে নিজ উদ্যোগে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে ছিলেন।

 

 

 

কিন্তু ওই অভিযানের ধারাবাহিকতা না থাকায় পুনরায় চলছে ইংরেজী ভাষায় লেখা সাইনবোর্ডের ব্যবহার।স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের পণ্যগুলো ব্যান্ডের, বিদেশেও শোরুম রয়েছে-তাই ইংরেজির ব্যবহার। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও ইংরেজি অক্ষরে লেখা। তবে অনেকেই জানেন না আদালতের এ রকম আদেশের কথা।স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান,শহরের বেশীরভাগ শপিংমল ও দোকানে ইংরেজির ব্যাবহার বেশি তাই আমরাও আমাদের সাইনবোর্ডে ইংরেজি লেখা ব্যবহার করেছি।

 

 

 

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সকল ক্ষেত্রে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চতের কথা থাকলেও, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নেই কোনো মাথা ব্যাথা। এ বিষয়ে নগরভবনের দায়িত্বশীলরা দিয়েছেন দায়সারা বক্তব্য।প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট বিভাগের ১৬৯৬/২০১৪ নং রিট পিটিশনে প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী সকল প্রতিষ্ঠানের (দূতাবাস, বিদেশী সংস্থা ও তৎসংশি¬ষ্ট ক্ষেত্র ব্যতীত) নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক।