২০১৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন নগর যুবলীগ সদস্য শাকিল হোসেন পলাশ। সেই নির্বাচনে ৭২টি ভোট বাতিল হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সালাউদ্দিন মাসুমের কাছে মাত্র ৫৫ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। তার পরও মাঠ ছাড়েননি। এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ছিলেন জনগণের খুব কাছাকাছি। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলেন। তবে দলের সমর্থন পাননি তিনি। পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ছাবিদ। যিনি ভোটারদের কাছে একবারেই নতুন মুখ।
একই অবস্থা নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডেও। সেখানকার কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা দলীয় সমর্থন পাননি। যদিও গত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী খায়রুল মামুনের কাছে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। তবে মাঠ ছাড়েননি তিনি। আওয়ামী লীগের এবারের দলীয় সমর্থন ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনিই নিশ্চিত ছিলেন দলীয় সমর্থনের ব্যাপারে। তবে গতকাল রবিবার সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার তালিকায় এলো একেবারেই নতুন প্রার্থী আজাদ হোসেন কালাম মোল্লার নাম। যিনি এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে অংশই নেননি।
শুধু এ দুটি ওয়ার্ডেই নয়, বরিশাল সিটি নির্বাচনে ৩০ ওয়ার্ডের ২৮টিতে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়া ১৪ প্রার্থীই একেবারে নতুন। যাঁরা এর আগে কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। বাকি ১৪ জনের মধ্যে ছয়জন বর্তমান কাউন্সিলর এবং আটজন এর আগে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়-পরাজয়ের স্বাদ নিয়েছিলেন। তবে নগরীর ২০ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান দুই কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের হলেও তাঁদের সমর্থন দেয়নি সংগঠনটি। কারণ ওই দুই ওয়ার্ডে এবার তাঁদের চাইতেও হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন আওয়ামী লীগে। তাই দুটি ওয়ার্ড উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সংরক্ষিত ১০টি কাউন্সিলর পদে দুজন নতুন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাকি আটজনের মধ্যে পাঁচজন বর্তমান কাউন্সিলর এবং অন্য তিনজন একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
হেভিওয়েট প্রার্থীর সামনে নতুনরা : মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এ কে এম মুরতজা আবেদীন। পর পর তিনবার ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি জয়ী হয়েছেন। এই ওয়ার্ডে মুরতজার সঙ্গে ভোটযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে নিখোঁজ যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মোনায়েমের ভাই মো. আহসান উল্লাহকে। তিনি এর আগে কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সেলিম হাওলাদারও পর পর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। তাঁর সঙ্গে ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরঞ্জিত দত্ত লিটুকে। যিনি এর আগে কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পর পর তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা জাকির হোসেন জেলাল। ওই ওয়ার্ডে তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন খানকে।
একইভাবে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নগর যুবলীগ সদস্য শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নাকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যেখানে রয়েছেন বিএনপি থেকে পর পর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর আলতাফ মাহামুদ। এর বাইরে নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান ফারুক। তাঁর বিপরীতে অংশ নেওয়ার জন্য সংগঠনটি সমর্থন দিয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মৃধাকে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপুর বিপরীতে দেওয়া হয়েছে নতুন মুখ আকতার উজ্জামানকে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর সৈয়দ আকবরের বিপরীতে নতুন মুখ রফিকুল ইসলাম খোকন দলীয় সমর্থন পেয়েছেন।
এ ছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর মীর জাহিদের বিপরীতে সমর্থন দেওয়া হয়েছে নতুন মুখ মো. কামরুজ্জামান সোনাকে, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে লড়বেন নতুন মুখ এম সাইদুর রহমান জাকির। এর বাইরেও আরো পাঁচজন নতুন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাঁরা হলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আনিছুর রহমান দুলাল, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুর রশীদ হাওলাদার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৌহিদুল ইসলাম ছাবিদ এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা। বর্তমানে এ পাঁচটি ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর সবাই বিএনপি সমর্থিত। যাঁরা প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েট।
যে ১৪টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নতুন প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে ওই ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী কখনোই বিজয়ী হতে পারেননি। এ ওয়ার্ডগুলো বিএনপি প্রার্থীদের দখলে রয়েছে। এখনো ওই ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপি প্রার্থীদের হারানো খুবই কঠিন। তবে যাঁদের আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে তাঁরা সবাই স্ব স্ব ওয়ার্ডে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী। প্রত্যেকেরই রয়েছে দলীয় প্রভাব ও বিত্ত। তাই অর্থের পাশাপাশি এলাকায় প্রভাবের কারণে ১৪টি ওয়ার্ডের কয়েকটিতে এবার বিজয়ী হতে পারবেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা এমন ধারণা নগর আওয়ামী লীগের।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘৩০টি ওয়ার্ডে সম্ভাব্য ৮৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে আবেদন পেয়েছি। তাঁদের থেকে ৩৮ জনকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। বয়সে তরুণ যোগ্য প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সুপারিশ করেছি। দলীয় সমর্থনের বাইরে গিয়ে যাঁরাই নির্বাচন করবেন, তাঁদের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বহিষ্কারও করা হতে পারে।’