চরম ঝুঁকির মুখে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রায় ৪ হাজার রোগী-স্বজন, ডাক্তার-নার্স। দক্ষিণের ১১ জেলার ভরশাস্থল এই হাসপাতালটি স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো হাসপাতালে স্থাপন করা হয়নি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।
প্রতি বছর হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলেও নিরাপত্তার জন্য কেনা হচ্ছে না অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। শুধু উদাসিনাতার কারণেই এই অত্যাবশকীয় যন্ত্রটি ক্রয়ে উদ্যোগ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ও চকবাজারে ভয়াবহ যে অগ্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এ ধরনের কোনো বিষয় বরিশালবাসী চায় না। তাই হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরা অনতিবিলম্বে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপনেরর দাবি জানিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, হাসপাতালে ৫০ বছরের পুরাতন তার দিয়ে কাজ চলছে। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। এগুলো স্থাপনের জন্য লেখা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। এখন হাসপাতালে এক হাজার শয্যায় উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে। সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এক হাজার শয্যায় হাসপাতাল হওয়ার পরও প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজারের মতো রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন আরো দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে।
আর রোগীদের সাথে স্বজন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাজার হাজার মানুষ এ হাসপাতালে আসা যাওয়া করে। এর পাশাপাশি হাসপাতালে রয়েছে শত কোটি টাকার বেশি মূল্যের আধুনিক এবং যুগপোযোগী যন্ত্রপাতি। বলতে গেলে সবগুলোই চলে বিদ্যুতের সহায্যে। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি যেসব কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে সেই কক্ষতো দূরের কথা তার দুইশ গজের মধ্যেও কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ ও কোবাল সিক্সট্রি মেশিন ব্যবহারে অনভিজ্ঞতার কারণে অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আর এমনটি ঘটলে প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন কিংবা এ থেকে ছড়ানো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব যন্ত্র থাকা উচিত তা হাসপাতালের কোথাও নেই।
এ হাপাতালের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালটি আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ। ৫ তলা বিশিষ্ট এ হাসপাতালের প্রতি তলায় রয়েছে ৭৮ হাজার বর্গফুট ফ্লোর। তাতে সর্বমোট ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫শ বর্গফুট।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালটিতে ৩১টির বেশি বিভাগ রয়েছে। তবে কোথায় কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ নানা অজুহাতে কোটি কোটি টাকা এবং মালামাল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। অথচ যে যন্ত্রটি গুরুত্বপূর্ণ সেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের জন্য আবেদন করেননি ইতোপূর্বে দায়িত্ব পালনকারী কোনো পরিচালকই। যার কারণে জীবন ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক হাজার রোগী-স্বজন ও চিকিৎসকরা। হাসপাতালে সম্প্রতি বড় কোনো অগ্নিকাণ্ড না ঘটলেও আতঙ্কে রয়েছেন খোদ সংশ্লিষ্টরা।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকাটা বাধ্যতামূলক। এছাড়া এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যেখানে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা থাকে সেখানে অবশ্যই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকা বাঞ্চনীয়। এতে মানুষের জান ও মাল দুই-ই রক্ষা পাবে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারাও আমাদের ডেকে তাদের অবস্থান থেকে আমাদের জ্ঞাত করা হয়েছে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে থাকার পরও দীর্ঘ বছর ধরে এ হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। ফলে রোগী, রোগীর স্বজন, চিকিৎসক-নার্সসহ হাসপাতালের হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মানুষের জান-মালের বিষয়টি মাথায় রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা দরকার। নতুবা যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র পরিকল্পনাবিদ মো. আসাদুজ্জামান জানান, যেখানে প্রচুর লোকের সমাগম সেখানে অবশ্যই অগ্নিনির্বাপকের জরুরি। নামুষের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা আগে থাকা উচিত ছিল। তবে এ ভবনটি অনেক আগে তো, হয়তো সে সময় এ বিষয়গুলো কেউ চিন্তা করেনি। তবে এখন নতুন সকল ভবনেই এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, ‘এ হাসপাতালে কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। তবে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড ও বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের পর আমরাও তৎপর হয়েছি। ইতোমধ্যে গণপূর্ত বিভাগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা সেগুলো ঢাকায় পাঠিয়েছে। এখন এগুলো পাস হলেই হলো।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে যে বৈদুতিক তার রয়েছে, তা আরো ৫০ বছরের পুরাতন। সেগুলোও পরিবর্তনের জন্য বলা হয়েছে। এমনকি ফায়ার সার্ভিস এনে হাসপাতাল দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা খুবই তৎপর রয়েছি।’
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে। পাশাপাশি আগামী স্বাস্থ্যসেবা কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি তোলা হবে।’