বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার মোশারফ হোসেন একজন ভ্রমণ প্রিয় ব্যক্তি। তিনি ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসেন। বিশ্বের ৩৬ টি দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তার কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনে কাজে লাগিয়েছেন। সকলের সাথে অত্যন্ত অমায়িক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করে থাকেন। এই অমায়িক ও ভ্রমণ প্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা এখন থেকে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার দায়ীত্ব পালন করবেন।
মোশারফ হোসেন ১৯৬৩ সালের ২ জানুয়ারি যশোর জেলার অভয়নগর থানার (নওয়াপাড়া) হিদিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ইব্রাহিম হোসেন মোল্লা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মা নূরজাহান বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মোশারফ প্রথম। ১৯৯১ সালে রংপুরের মেয়ে নূরে নাজনীন বেগম’র সাথে তিনি বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। তাদের একমাত্র সন্তান ফারাহ্ তাসনিম রঙ্গন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে অধ্যয়নরত।
শিক্ষাজীবন : মোশারফ হোসেন শৈশবে শিক্ষাজীবন শুরু করেন বাড়ির পার্শ্ববর্তী মক্তব থেকে। এখানে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর ৫ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু সেই বছর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকে। পরবর্তী বছর ১৯৭২ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন হিদিয়া এএনএইচ হাই স্কুলে। সেখানে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ছোট বেলা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ওই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় ফুলতলা রি-ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হন মোশারফ হোসেন।
১৯৭৭ সালে সেখান থেকে তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮০ সালে খুলনার সরকারি ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ে বিএসসি কৃষি (অনার্স)-এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৮৪ (১৯৮৬) সালে অনার্স এবং ১৯৮৫ (১৯৮৯) সালে কীটতত্ত্বে (এন্টোমলজি) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি প্রাপ্ত হন। শিক্ষা জীবনে তিনি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন। তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’র ওয়াটার পোলো টিমের ক্যাপ্টেনও ছিলেন।
কর্মজীবন : শিক্ষা জীবন শেষে ১৯৮৯ সালে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুরে কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে চাকুরি শুরু করেন মোশারফ হোসেন। সেখানে এক বছর কাজ করার পর ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর বিসিএস ১৯৮৬ (৮ম) ব্যাচে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ সার্ভিসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। কৃতিত্বের সাথে পুলিশ একাডেমি সারদায় প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে শিক্ষানবীশ এএসপি হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় যোগদান করেন। এরপর তিনি এএসপি হিসেবে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, বিলাইছড়ি (রাঙ্গামাটি) এবং এএসপি (সার্কেল) হিসেবে সাতক্ষীরায় চাকুরি করেন। ১৯৯৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা, মাদারীপুর জেলা, ফেনী জেলা ও গাজীপুর জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে খুলনা জেলা, পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশ স্টাফ কলেজ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও সিরাজগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেন মোশারফ হোসেন।
২০১২ সালে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান এবং সিআইডি ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে এনএসআইএ পরিচালক হিসেবে যোগদান করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যাস্ত হয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন, দিল্লীতে মিনিস্টার (স্থানীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন। কর্মজীবনে মোশারফ হোসেন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অ্যাঙ্গোলা, বসনিয়া ও সুদানের দারফুরে ৪ বছর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। জাতিসংঘ মিশনে অবস্থানকালে বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুবাদে তিনি বিশ্বের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দেশসহ ৩৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি সকলের সাথে অত্যন্ত অমায়িক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করে থাকেন।