ভোলা সদর উপজেলায় সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ চলমান। ভেদুরিয়া ইউপি আনন্দবাজার সড়কে পুরোনো আয়রন ব্রিজের স্থলে নতুন ৩৩ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এরই মধ্যে ব্রিজটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ। তবে যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তাতে ব্রিজটির উচ্চতা ও মূল রাস্তা থেকে ব্রিজটির ঢাল যথাযথ হয়নি। এতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বরিশাল বিভাগে আরও কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণেও একই চিত্র উঠে এসেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে আইএমইডি বলছে, পুরাতন আয়রন ব্রিজের স্থলে নতুন যে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি রাস্তা থেকে ১ দশমিক ২৫ মিটার উঁচু এবং রাস্তা থেকে মাত্র ৫-৬ ফুট দূরত্বে। ফলে অ্যাপ্রোচ রোডের টার্নিং রেডিয়াস যথাযথ না হয়ে স্লপ হবে। এক্ষেত্রে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে।
আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিজ নির্মাণকাজের গুণগতমান ভালো দেখা গেছে। খাল/নদীর দুই পাশে প্যারালাল রাস্তা থাকায় অনেক ব্রিজের এক পাশে অ্যাপ্রোচ রোড থাকলেও অপর পাশে মূল রাস্তা থেকে খাড়া স্লপে অ্যাপ্রোচ রোডে উঠতে হবে, যার ঢাল হবে ১:৩ থেকে ১:৪। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। এছাড়া ট্রাফিক ভলিউম, রাস্তার প্রশস্ততা বিবেচনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্মিত কয়েকটি ব্রিজের ডিজাইন ওভারসাইজ হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নেয়। প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্পটি বর্তমানে দুই হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৪৯টি ব্রিজ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের কথা থাকলেও পাঁচ বছরে মাত্র ৬৬০টি ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখনো ৪৬৬টি ব্রিজের টেন্ডারই হয়নি। ৬০৬টি ব্রিজের কাজ এখনো ৫০ শতাংশের নিচে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় অনুমোদিত সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী কার্য ক্রয়ের ১২৩৫টি প্যাকেজ রয়েছে। ১২৩৫টি প্যাকেজের (২০৪৯টি স্কিম) মধ্যে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ৫৯৫টি প্যাকেজের (৬৬০টি স্কিম) কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২১০টি প্যাকেজের (৩১৭টি স্কিম) কাজ ৫০ শতাংশের ওপরে, ২৭০টি প্যাকেজের (৬০৬টি স্কিম) কাজ ৫০ শতাংশের নিচে। বাকি ১৬০টি প্যাকেজের (৪৬৬টি স্কিম) দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে আশির দশকে খাল/নদী পারাপারের জন্য অসংখ্য লোহার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। একসময় ব্রিজগুলো খুবই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। আবার বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলো কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও অকৃষি পণ্য উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে।
প্রকল্পের আওতায় আয়রন ব্রিজের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে। আমরা প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিং করবো। আলাদাভাবে সুপারিশ করে বিষয়গুলো জানতে চাইবো। বই আকারে প্রতিবেদন দিলে তেমন কোনো কাজ হয় না। অনেকে বই নিয়ে রেখে দেয়। মিটিং করে চিঠি দিলে কিছু কাজ হবে। একই ব্যত্যয় বারবার যেন না হয় সে বিষয়েও আমরা সুপারিশ করবো।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের জরাজীর্ণ লোহার ব্রিজের স্থলে আরসিসি/পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ ও লোহার ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/ পুনর্বাসনের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন সমন্বিত সড়ক নেটওয়ার্ক সুপ্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের অনুকূলে সবশেষ অনুমোদিত ডিপিপির সংস্থান মোতাবেক এডিপি/আরএডিপিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া গেলে ১৬০টি প্যাকেজের (৪৬৬টি স্কিম) দরপত্র আহ্বান করা হবে।
৮৪০ জনের ওপর জরিপ
আইএমইডি প্রকল্পভুক্ত এলাকার ৮৪০ জনের ওপর জরিপ করেছে। এতে এলাকার লোকজন বলেছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে তাদের মাসিক আয় সামগ্রিকভাবে কিছু বেড়েছে। কৃষি, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি ও দুগ্ধ শিল্প, পরিবহন খাত, অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার কাজ, পর্যটন খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ব্রিজ নির্মাণের ফলে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারী ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা এবং আগের তুলনায় নারী শিক্ষার প্রসার হয়েছে। উন্নতি হয়েছে গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার।
নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের অন্যতম সবল দিক হচ্ছে প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। ব্রিজ নির্মাণকাজে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং নির্মাণ কাজের গুণগতমান বজায় রাখা হয়েছে। অন্যতম দুর্বল দিক হলো- মূল ডিপিপি প্রণয়নের সময় যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি এবং প্রকল্পের আওতায় ডিপিপি/আরডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী যথাসময়ে অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্নের জন্য সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় হওয়া দরকার। প্রকল্পের আওতায় যে সব ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ সম্পন্ন হয়নি সেসব ব্রিজের ক্ষেত্রে যথাযথ ঢাল রেখে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্নের উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক।