বরগুনায় মেয়েসহ বৃদ্ধ মকবুলের ঠাঁই এখন অন্যের গোয়ালঘরে

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বরগুনার বেতাগী উপজেলায় নিজের কোনো ঘর না থাকায় প্রতিবেশীর গোয়ালঘরে বসবাস করেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মকবুল হাওলাদার ও তার ১৪ বছরের মেয়ে মিম। কনকনে শীতের মধ্যে তারা গোয়ালঘরে মানবতার জীবনযাপন করছেন।

গবাদিপশুর বর্জ্যের মধ্যে নিরুপায় হয়ে বসবাস করা আশ্রয়হীন ওই বৃদ্ধের শেষ বয়সে যেন দেখারও কেউ নেই। তীব্র শীতে গোয়ালঘরের স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে বিছানো খড়কুটা ছেঁড়া কম্বল এখন বাবা-মেয়ের ভরসা। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে কখনও খেয়ে আবার কখনও না খেয়েই দিন কাটছে বাবা-মেয়ের।

মকবুলের বাড়ি বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জিলবুনিয়া গ্রামে। তিনি খালেক হাওলাদার নামে এক ব্যক্তির একটি গোয়ালঘরে গবাদিপশুর বর্জ্যের মধ্যে বসবাস করছেন মেয়েকে নিয়ে।

জানা যায়, দারিদ্র্যতার ঘূর্ণিপাকে বাস করা সেই ১৪ বছর বয়সি মেয়ে এবং ৭৫ বছর বয়সি বাবার বেঁচে থাকা এখন কষ্টসাধ্য। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে হাঁটাচলা বন্ধ বৃদ্ধ মকবুল হাওলাদারের।

তবু পেটের দায়ে রোগা শরীর নিয়ে লাঠি এবং মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে খাবার তাগিদে তাকে বের হতে হয় গ্রামে গ্রামে। মানুষের কাছে হাত পেতে যদি কিছু জোটে তা দিয়েই বাবা মেয়ের পেট চলে। কিন্তু যেদিন শরীর ভালো থাকে না, সেদিন বৃদ্ধ গ্রামেও বের হতে পারে না। উপোস থাকতে হয় বাবা ও মেয়েকে।

বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালঘরে রয়েছে এলোমেলো তার পুরনো কাপড়-চোপড়। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাঁড়ি-পাতিল। এসব নিয়েই তার শেষ বয়সের সংসার।

কান্না ভেজা চোখে বৃদ্ধ বলেন, খুব কষ্টে আছি আমি ও আমার মেয়ে। এই শীতে রাতে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। থরথর করে কাঁপছে শরীর। অসুস্থ থাকলেও টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না।

টাকার অভাবে কিছু খেতে পারি না। এই জীবন আর ভালো লাগে না। বৃদ্ধ বাবা ও মেয়ের এমন অবস্থায় মীমকে জিজ্ঞাসা করলে শুধুই কান্না করে আর কিছু বলতে পারে না মেয়ে মীম।

স্থানীয়রা জানান, গত সাত বছর আগে বৃদ্ধ মকবুল হাওলাদারে স্ত্রী মারা যান। তখন মীমের বয়স ছয় বছর। তখন বৃদ্ধ মেয়েকে নিয়ে একটি ছোট্ট কুঁড়ের ঘরে বসবাস করতেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্য গত ছয় মাস আগে বৃষ্টি আর বাতাসে মকবুলের সেই কুড়ের ঘর মাটির সঙ্গে মিশে যায়। প্রতিবেশী খালেদ হাওলাদারের গোয়ালঘরে ঠাঁই হয় বাবা ও মেয়ের। প্রায় ছয় মাস ধরে সেখানেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

প্রতিবেশী মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, আসলেই বৃদ্ধ মকবুল এবং তার এই ছোট মেয়েকে নিয়ে খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি তাকে আর্থিক সহায়তা এবং একটি সরকারি ঘর দেওয়ার দাবি জানাই।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালে-হীন বলেন, বৃদ্ধ মকবুল হাওলাদার এবং তার মেয়ে মীম মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি জানতে পেরেছি।

এই আধুনিক যুগে একজন মানুষ তার পরিবারসহ গোয়াল ঘরে থাকে; এটা আসলে কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়। এই পরিবারটা সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার বেতাগী উপজেলা প্রশাসন তা নেবে।

তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে তাকে কোনো মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে খুব দ্রুতই তাকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে। শীতের কম্বল কিংবা কোনো প্রতিবন্ধী বা সামাজিক সুরক্ষা ভাতার আওতায় নেওয়ার পদক্ষেপ খুব দ্রুত নেব।