বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২৩ সহস্রাধিক, প্রতিবন্ধী হচ্ছেন ৮০ হাজার

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮ হাজার মানুষের প্রাণহানির তথ্য মিলেছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সড়কে প্রতিদিন ৬৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এই তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জন মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আহত হচ্ছে। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি ১৭ বছরের কম বয়সী শিশু। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন মানুষ প্রতিবন্ধী হচ্ছেন কেবল সড়ক দুর্ঘটনায়।

 

শনিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘সড়ক আইন ও বিধি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত সকল নাগরিককে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে মারা যায় ২৪ হাজার ৯৫৪ জন। সংস্থাটির তথ্যমতে, হতাহতদের ৬৭ শতাংশই ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী। এক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটি দাবি করছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত জিডিপির ক্ষতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা বিশেষ গুরুত্বের সাথে নথিভুক্তি করা, বিশেষ নজরদারিতে তদন্ত করা, দ্রুততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করা; দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা গেলে এই সেক্টরে আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা সক্ষম হবে। অনেক ক্ষেত্রে দূর-দূরান্তের যাত্রীরা রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে যানবাহন শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সারাদেশে সিসি ক্যামেরা পদ্ধতিতে ট্রাফিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা গেলে প্রতিটি মামলায় আসামি শনাক্ত করা সহজতর হবে। প্রতিটি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা আমলে নেওয়া যাবে। তখন মানুষের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা কমে আসতে বাধ্য হবে। এরই মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরত আনা সম্ভব।

অন্যদিকে, ট্রাফিক আইনের মামলায় প্রত্যেক গাড়ির মালিকের ব্যাংক হিসাবের সাথে সম্পৃক্ত রেখে ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু করে মামলার সাথে সাথে ব্যাংক হিসাব থেকে অটো জরিমানা আদায়ের পদ্ধতি চালু করা গেলে বাংলাদেশের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বা উন্নত বিশ্বের সড়ক মহাসড়কের মত এদেশের প্রতিটি চালকও দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য হবে। চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট করা। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন আলাদা করা জরুরি। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার থাকলেও সড়ক নিরাপত্তায় তেমন কোনও অগ্রগতি নেই। তিনি মনে করেন, ই-ট্রাফিকিং সিস্টেম চালু করা গেলে সড়কে দুর্ঘটনা ৮০ শতাংশ কমে আসবে।

তিনি বলেন, দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক যে ক্ষতি হচ্ছে। বুয়েটের এআরআই’র হিসাব বলছে, গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা যদি নির্ভরশীল মানুষের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে সেটিকে জনসংখ্যা বোনাস বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। বাংলাদেশ এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের জন্য গর্ব করে। সড়ক দুর্ঘটনা এ গর্বের জায়গাতেই বেশি আঘাত হানছে।

পুলিশের তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের সাড়ে ১৮ শতাংশ শিশু। এদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে নিহতদের ৫১ শতাংশ একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

 

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় নেতা মো. মহসিন, মনজুর আলম মাষ্টার, আবু তালেব এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, রাহিলা আনজুম খুশব, আয়েশা খাতুন, পান্না আক্তার প্রমুখ।