বরিশাল নগরে নাজিরের পুলের দক্ষিণ দিকে কয়েক দিন ধরে মানুষের ভিড়। এ সড়কেই রাজধানীর ধানমন্ডিতে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক বাড়ির আদলে তৈরি হয়েছে প্রতিকৃতি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এটি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে উপস্থাপিত হয়েছে ১৫ আগস্টের ঘাতকদের নৃশংসতা। ব্যতিক্রমী এমন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গত শুক্রবার থেকে সাধারণ মানুষ সেখানে ভিড় করছেন, অবনতচিত্তে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে ধিক্কার জানাচ্ছেন ঘাতকদের।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এবার বরিশালে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) রফিকুল ইসলাম খোকন। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের এই প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির সামনে লাগানো হয়েছে বেশ কিছু প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা আছে ‘কাঁদো বাঙালি কাঁদো’, ‘রক্তে ভেজা সিক্ত মাটি, বিবর্ণ এই ঘাস, বুকের মাঝে রাখা আছে বঙ্গবন্ধুর লাশ’। এখান থেকেই মাইকে বেজে উঠছে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান এবং ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডয়ের স্বীকৃতি পাওয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ।
কেন ৩২ নম্বরকে তুলে ধরার এই প্রয়াস? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘বাড়িটি আমাদের ইতিহাসের অংশ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই বাড়ি, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস সম্পর্কে হয়তো জানে না। তাদের জানানো এবং এই সত্য ইতিহাসের বিষয়ে কৌতূহলী করে তোলাই ছিল আমার লক্ষ্য।’
নানা কারণে বাঙালি ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে একসূত্রে গেঁথে আছে ৩২ নম্বরের এই ঐতিহাসিক বাড়ি। এই বাড়ি ঘিরে জন্ম নিয়েছে বাঙালি ও বাংলার হিরণ্ময় ইতিহাস। তেমনি মিশে আছে ৫৬ হাজার বর্গমাইল বাংলাদেশের মর্মন্তুদ বেদনার কালো অধ্যায়। যে বাড়ি ছিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার, সেই বাড়িকেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে কলঙ্কিত ইতিহাসের নিথর সাক্ষী বানিয়েছিল ঘাতকেরা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এই বাড়িতে। এই দিনটি স্মরণে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার ৩২ নম্বরের এই ঐতিহাসিক বাড়ির আদলটি নির্মাণ করা হয়। নগরে এ ধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম এবং ব্যতিক্রমী। এ জন্য গত শুক্রবার থেকেই সাধারণ মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
গোলাম সরোয়ার নামে একজন কলেজশিক্ষক বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক বাড়ির আদলে রেপ্লিকাটি সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। এমন উদ্যোগ নেওয়ায় নতুন প্রজন্ম এই বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়টি দেখতে পারছে।