অনলাইন টেলিভিশন, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা। অনলাইনের সেসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলা, আরাকান ও বার্মিজ ভাষায় নিয়মিত নিজেদের ‘বার্তা’ ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।
ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের যে পেজটি বেশি সক্রিয় তার নাম রোহিঙ্গা টিভি। পেজের কাভার ফটো হিসেবে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও নিধন অভিযানের চিত্র বিভিন্ন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
কাভার ফটোতে ‘দ্য অনগোয়িং মিয়ানমার জেনোসাইড অ্যাগেইনস্ট রোহিঙ্গা’ বা ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের চলমান গণহত্যা’ স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ইউটিউবে তাদের যে চ্যানেলটি আছে তাতে টেলিভিশনের মতো করেই রোহিঙ্গা সম্পর্কিত সর্বশেষ খবর জানানো হচ্ছে।
ইউটিউব চ্যানেলটিরও নাম দেয়া হয়েছে ‘রোহিঙ্গা টিভি’। যাতে স্লোগান হিসেবে লেখা রয়েছে, ‘নিপীড়িত, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কথা বলতে আমরা আসছি শীঘ্রই…’। চ্যানেলটির বিস্তারিত খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, এটি যাত্রা শুরু করেছে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
রোহিঙ্গা টিভি নামের ‘সংবাদভিত্তিক’ ওই ইউটিউব চ্যানেলটিতে মোট ৩৬টি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩১টি ভিডিও আপলোড হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। আর একটি আপলোড করা হয় গত আগস্টে। বাকি চারটি চলতি মাসের প্রথম চারদিনে আপলোড করা হয়েছে।
গত ৩০ আগস্ট রোহিঙ্গা নেতা মুহিববুল্লাহ’র একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে রোহিঙ্গা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে। সেখানে তিনি ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের স্মরণসভা নিয়ে নানা মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা টিভি নামে তাদের একটি অনলাইন পোর্টালও রয়েছে। যেখানে স্লোগান হিসেবে লেখা রয়েছে ‘ইন সার্চ অব ট্রুথ অ্যান্ড রাইটস’। তবে যোগাযোগের স্থলে কারও পরিচয় কিংবা কোথো থেকে এটি প্রকাশিত হচ্ছে সে সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি।
তাদের যে ফেসবুক পেজটি রয়েছে সেখানে রোহিঙ্গা টিভি নামের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত ‘সংবাদ প্রতিবেদন এবং ইউটিউব চ্যানেলের ‘সংবাদভিত্তিক’ ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করা হয়। সেই পেজটিতে সহস্রাধিক মানুষ ‘লাইক’ দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা টিভি নামের ওই ফেসবুকের পেজের সংবাদ প্রতিবেদন কিংবা ভিডিও কনটেন্টে যারা লাইক দিয়েছেন তাদের অনেকের ফেসবুক প্রোফাইলের নাম বার্মিজ ভাষায়। তাদের মধ্যে অনেককে সেসব কনটেন্ট শেয়ার করতেও দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে অন্তত পাঁচ লাখ এ অনলাইন টিভি সম্প্রচারের দর্শক। অত্যন্ত উন্নতমানের মোবাইল সেট ব্যবহার করেন তারা। সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে খবর প্রচার হয়। এছাড়া রোহিঙ্গাদের রয়েছে নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ।
ছবি সংবলিত প্রতিটি পোস্ট লেখা হচ্ছে বাংলা কিংবা বার্মিজ ভাষায়। সেসব পোস্ট নিয়মিত ভাইরাল হচ্ছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা তাতে মন্তব্য করছেন।
পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গা শিবিরের মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সিম বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে সেখানে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ভুয়া পোস্টের উদ্ভূত উত্তেজনা থেকে হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে। ফলে কক্সবাজার, টেকনাফ, চট্টগ্রামের স্থানীয় মানুষ বিপদের সম্মুখীন হবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত মোট ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত ১১ লাখ রোহিঙ্গার কাছে পাঁচ লাখেরও বেশি মোবাইল ফোন আছে। যেগুলো বেশ উন্নতমানের। শুধু বাংলাদেশ নয় মিয়ানমার সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে অবস্থিত তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন।