একটি প্রকল্প নিয়ে জটিলতার কারণে বাংলাদেশের জন্য অর্থছাড় বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এর ফলে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
‘লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-২’ শীর্ষক স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ফেরত না দেওয়ার কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকার এ প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছিল ২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষে এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অংশের ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা অব্যয়িত থেকে যায়, যা সময়মতো ফেরত দেওয়া হয়নি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের পর এ বিষয়টিকে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থাটির দ্বিতীয় দফা জটিলতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৮ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছে, ওই অর্থ ফেরত না পাওয়ায় তারা বাংলাদেশের জন্য নতুন করে আর ঋণ কিংবা অনুদান ছাড় করবে না। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রকল্পের অর্থ সময়মতো ফেরত না দেওয়ার কারণে দাতা সংস্থাটি অর্থছাড় বন্ধ রেখেছে। তিনি বলেন, ফেরত না দেওয়া টাকার পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রকল্প সেটেলড না করে অন্য প্রকল্পে অর্থ ছাড় করে না বিশ্বব্যাংক। ইআরডি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বর্তমানে আড়াই বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প রয়েছে বাংলাদেশে। স্থানীয় মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আরও ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা। তবে ওই প্রকল্পের অর্থ ফেরত নিয়ে জটিলতার কারণে এখন নতুন করে অর্থছাড় না হলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেবে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে ইআরডি। ১৬ জানুয়ারি পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জুলাই, ২০১১ থেকে জুন, ২০১৭ মেয়াদে বাস্তবায়িত লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-২ (এলজিএসপি-২)-এর অব্যয়িত অর্থ নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে ফেরত প্রদানের কার্যক্রম ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭-এর মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত না দেওয়ায় বিশ্বব্যাংক নতুন কোনো লোন, ক্রেডিট, গ্রান্ট প্রদান না করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ফলে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ দেশের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজেট বরাদ্দ না থাকায় এ টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর অব্যয়িত টাকা ফেরত দেওয়া হবে বিশ্বব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। জনসাধারণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২)। জুলাই, ২০১১ থেকে জুন, ২০১৬ পর্যন্ত এলজিএসপি-২ বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জনগণের দ্বারা উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ, আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করা, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।