প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কারাদণ্ড দিতে বাধ্য হবেন বলে দখলদারদের সতর্কবার্তা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর শ্যামপুর এলাকায় শ্যামপুর খাল পরিষ্কার কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র তাপস দখলদারদের বিরুদ্ধে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, দখল ঢাকাবাসীর জন্য একটি বড় সমস্যা। দখলদারদের বিরুদ্ধে আমরা ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবো। প্রয়োজন হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমরা তাদের কারাদণ্ড দিতে বাধ্য হবো।
খাল সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো খালগুলো সম্পূর্ণরূপে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা; যাতে করে বছর বছর নতুন করে খনন বা এগুলো অপসারণ করতে না হয়। সেই লক্ষ্যে আমরা একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। প্রকল্পটি প্ল্যানিং কমিশন থেকে কিছু মতামত দিয়ে পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো আবার বিচার-বিশ্লেষণ-পর্যালোচনা করে জমা দেবো। আমরা আশাবাদী যে, এই প্রকল্পটা পাস হলে স্থায়ীভাবে সমাধানের দিকে এগুতে পারবো। সেইসঙ্গে খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদার মুক্ত করা এবং সেই সীমানা বেষ্টনিগুলো স্থায়ীভাবে স্থাপন করা; এগুলো অত্যন্ত জরুরি। এগুলো যদি করতে পারি তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে যেতে পারবো।
এসময় সড়কের ওপর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারদের স্থায়ী পার্কিং বাণিজ্য নিয়ে করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শেখ তাপস বলেন, আমরা যেখানেই দখল পাচ্ছি সেখানেই অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা সপ্তাহে পাঁচদিনই দখলমুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ঢাকা শহরে এত জনগোষ্ঠী, এত জনসংখ্যার চাপ যে, দখল বাণিজ্য অত্যন্ত সংকট হিসেবে পরিণত হয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলছি। এই আগ্রাসনের জন্য ঢাকাবাসীর জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। তারপরও আমরা বলিষ্টভাবে কাজ চালিয়ে যাবো। এতে সবার সহযোগিতা চাই, ঢাকাবাসীর সহযোগিতা চাই। ঢাকাবাসী যেন আমাদেরকে এ বিষয়গুলো অবগত করেন। তারাও যেন কিছু ভূমিকা নেন।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি সুফল ঢাকাবাসীকে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মেয়র শেখ তাপস বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমাদের আসলে অনেক পুঞ্জিভূত সংকট। আমরা একটা একটা করে সেগুলো সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছি। জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর জন্য একটি অত্যন্ত দূরূহ সমস্যা। আমরা গতবছর কিছুটা সুফল দিতে পেরেছি। এবার আমরা আশাবাদী, আরেকটু বেশি সুফল দিতে পারবো এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে এগুতে পারবো।
তিনি বলেন, গতবছর আমরা খাল পাওয়ার সঙ্গেই পরিষ্কার করা, আবর্জনা ও পলি অপসারণ এবং দখলমুক্ত করেছি এবং নর্দমাগুলো পরিষ্কার করেছি। যেসব জায়গায় অবকাঠামো উন্নয়ন, নর্দমা সংস্কার, নর্দমা নির্মাণ প্রয়োজন ছিল- নিজ অর্থায়নে আমরা সেগুলোর কাজ আরম্ভ করেছি। খালগুলো লক্ষ্য করেছেন গতবার পরিষ্কার করার পর এবার আবার ভরে গেছে এবং এমনভাবে ভরে গেছে যে, মনে হয় দীর্ঘদিন এগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। এতে কী পরিমাণ বর্জ্য ও পলি এখানে জমে সেটা অনুমান করা যাচ্ছে। এবারও আমরা সূচি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ আরম্ভ করেছি। কিন্তু শ্যামপুর খালের যে অংশে দাঁড়িয়ে আছি, এখানে বিভিন্ন জায়গা বিভিন্নভাবে দখল অবস্থায় আছে। আমরা এগুলো এখন দখলমুক্ত করার কার্যক্রম হাতে নেবো। খালের পর পর্যায়ক্রমে পরবর্তীতে আবার নর্দমাগুলো পরিষ্কার করবো।
এছাড়া আজকের পরিদর্শন কার্যক্রমে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ২ ও ৫ এর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের নির্দেশনা দেন। তাছাড়া মেয়র বিবির বাগিচা এলাকায় সুতিখালপাড় থেকে কাজলার পাড় পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নয়নমূলক কাজ এবং নগরীর ডেমরায় খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান ও সড়ক পরিদর্শন করেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক উপস্থিত ছিলেন।